যারা টেকনোলজির সাথে জড়িত তারা সবাই মনে করছে আগামী দিনের কম্পিউটার হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আমরা সবাই কম বেশি সুপার কম্পিউটার সম্পর্কে জানি এটিও মুভির কাল্পনিক হিরো সুপারম্যানের মতো সবকিছু করতে পারে।
কিন্তু আমি এখন যে কথাটি বলবো এটা শুনার পর আপনাদের চোখ কপালে উঠে যাবে! সুপার কম্পিউটার দিয়ে যেসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না, সেগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। এই আর্টিকেলে আমরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে জানবো। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেই-
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বা কোয়ান্টাম গনণা কি?
সাধারণত কম্পিউটার চিপের মধ্যে বিট(Bit) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর বিট হচ্ছে কম্পিউটারে তথ্য রাখার জায়গার একক। যদি বিটকে ক্ষুদ্র সুইচের মতো ভাবেন তাহলে সুইচ অফ থাকলে এটিকে শূন্য দ্বারা এবং সুইচ অন থাকলে এক দ্বারা বোঝানো হয়।
আপনারা যে ওয়েবসাইটগুলো দেখে থাকেন এবং যে ছবিগুলো তুলে থাকেন সেগুলো শেষ পর্যন্ত এক এবং শূন্যের সংমিশ্রণে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বিট দিয়ে তৈরি। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে গণনা করে আমরা অনেক কাজ করে থাকি কিন্তু মহাবিশ্বের বাস্তবে যেভাবে কাজ করে তা প্রতিফলিত করা যাবে না।
কারণ প্রকৃতিতে জিনিসগুলো কেবল চালু বা বন্ধ থাকে না, তারা চলমান এবং অনিশ্চিত।
সুপার কম্পিউটার গুলো অনিশ্চয়তার বিষয় বা প্রাকৃতির বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে গনণা করতে পারে না। সুপার কম্পিউটারের এটি একটি সমস্যা। গত ১০০ বছরে পদার্থবিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, খুব ছোট আকারের কনা যেমন ইলেকট্রনের বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র দেখার চেষ্টা করা হলে তখন অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে। আর অতি ক্ষুদ্র এমন কণার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন যে শাখা বের করেছে সেটাই কোয়ান্টাম মেকানিক্স।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি, পদার্থবিজ্ঞান আবার রসায়নের ভিত্তি একইভাবে রসায়ন আবার জীব বিজ্ঞানের ভিত্তি। যেকোনো জিনিস বা ঘটনা কিভাবে ঘটছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য, সেই সাথে গণনা করার জন্য আরো ভালো পদ্ধতি এবং যে পদ্ধতি অনিশ্চিত তার বিষয়গুলো ঠিক দেখাতে পাড়বে। বিজ্ঞানীদের এই বিষয়গুলোর জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কার করা হয়েছে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি?
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর বিভিন্ন ধর্মকে সরাসরি কাজে লাগিয়ে একটা কম্পিউটারের মাধ্যমে যেসব কাজ করা হয় তাকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বলা হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলো থেকে হাজারগুণ গতি সম্পন্ন হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জনক কে?
মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফিলিপস ফাইম্যান হচ্ছেন কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জনক। রিচার্ড ফাইম্যান ১৯৬৫ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী জুলিয়ান সেইমুর এবং জাপানি বিজ্ঞানী সিন-ইতিরোর সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পান।
রিচার্ড ফাইম্যান ১৯৪২ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের পর মেক্সিকোতে অন্যান্য পদার্থবিদদের সাথে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সাহায্য করেন। ১৯৬৪ সালে একটি লেকচারে তিনি বলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্স কেউই অবস্থা পারবে না।
বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাম কি?
বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাম হলো “আইবিএম কিউ সিস্টেম ওয়ান” (IBM ‘Q System One’)। এর মধ্য দিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাজারের নিয়ে আসার জন্য আইবিএম এর প্রথম প্রচেষ্টা।
আইবিএম হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন কর্পোরেশন যা একটি বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে।
বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কার হয় কত সালে?
বহু বছর ধরে কোয়ান্টাম কোম্পানি তৈরি করার পরিকল্পনা হচ্ছিল। গবেষণাগারে বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অবশেষে আইবিএম বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে আছে একটি প্রযুক্তি মেলায় ২০১৯ সালে বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার উন্মোচন করা হয়। তবে এখনো পুরোপুরি ভাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি নয়। এটাকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনতে আরো অনেক বছর সময় লাগবে।
বিশ্বের আরো অনেক বড় বড় টেক কোম্পানিগুলৌ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করছে। গুগল, ইন্টেল, মাইক্রোসফট এর মতো কোম্পানিগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাণিজ্যকভাবে বাজারে নিয়ে আসতে কাজ করে চলছে। তারা সফল হলে অসম্ভব সব গবেষণা এবং প্রযুক্তির দরজা খুলে যাবে বিজ্ঞানীদের জন্য।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আকৃতি
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আকৃতি জানার আগে চলুন এর কর্মক্ষমতা সম্পর্কে একটি ছোট্ট উদাহরণ দেখা যাক। ধরুন আপনার সামনে একটি ফোনবুক রয়েছে যেখানে ২০ কোটি মানুষের নাম ও ফোন নাম্বার রয়েছে। আর এই ফোন বুক থেকে যদি কারো নাম ও নাম্বার বের করতে চাই তাহলে তাকে গড়ে ১০ কোটি অপারেশন সম্পূর্ণ করতে হবে।
যন্ত্রকে যত বেশি অপারেশন এবং কাজ করার প্রয়োজন হবে তত বেশি সময় এবং শক্তি দরকার হবে। আর এই একই কাজ কোয়ান্টাম কম্পিউটার গ্রোভারস অ্যালগারিদম ব্যবহার করে মাত্র ২০ হাজার অপারেশন চালিয়ে ফলাফল বের করতে সক্ষম।
এত দ্রুত গতি সম্পন্ন এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো কম্পিউটারের আকৃতি স্বাভাবিকভাবে একটু বড়ই হবে। বিস্ময়কর ক্ষমতার কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ৯ ফুট লম্বা এবং ৯ ফুট প্রশস্ত কাচের আবরণের মধ্যে বায়ু নিরোধক পরিবেশে স্থাপন করা হয়েছে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারে একটি অতি উচ্চ ভ্যাকুয়াম চেম্বার রয়েছে যেটি স্টেইনলেস স্টিলের গোলক যা প্রায় একটি বাস্কেটবলের সমান। লেজারের আলোতে পোর্টাল গুলি সহ এবং এর মধ্যে বায়ুকে এমনভাবে পাম্প করা হয়েছে যে বাইরের তুলনায় ভিতরে পাঁচ গুণ কম কণার শূন্যতা রয়েছে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করার অনেক প্রচুর সরঞ্জাম রয়েছে। কোয়ান্টাম ইনফরমেশন অ্যালগরিদম এর জন্য ব্যবহৃত জটিল কিউবিট সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় শত শত স্বাধীন বৈদ্যুতিক সংকেতকে সুনির্দিষ্ট ভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে।
আর সমস্ত কাজগুলো লেজারের সাহায্যে করা হয়, তাই আলোর সঠিক রঙের জন্য নির্দিষ্ট করা প্রতিটি অপটিক্যাল টেবিল জুড়ে অসংখ্য অপটিক্স সারিবদ্ধ করা থাকে। আর এইসব সরঞ্জামের জন্য দুটি বড় অপটিক্যাল টেবিল প্রয়োজন হয় যেগুলো প্রায় ৫ ফুট চওড়া এবং ২০ ফুট লম্বা।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে?
সাধারণত আমরা যে কম্পিউটার গুলো ব্যবহার করি সেগুলো ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার। এখানে ০(শূন্য), ১(এক) দিয়ে সবকিছুর হিসাব করা হয়ে থাকে। সার্কিটের নির্দিষ্ট মাত্রার ভোল্টেজ থাকলে এক আর না থাকলে শূন্য।
সুতরাং বলা যায় শূন্য ও এক হলো ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের তথ্যের একক যাকে বিট বলা হয়। অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের তথ্যের একক হলো কিউবিট। কোয়ান্টাম হচ্ছে যেকোনো কিছুর ক্ষুদ্রতম অংশ।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুলোতে কিউবিট ব্যবহার করে থাকে। আর কিউবিট গুলো চালু বা বন্ধ হওয়ার পরিবর্তে সুপার পজিশন অবস্থানে থাকতে পারে। অর্থাৎ কিউবিট একই সাথে চালু এবং বন্ধ উভয় অবস্থানে থাকতে পারে। আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে একটি উদাহরণ দেখে নেয়া যাক- একটি কয়েন বা মুদ্রা নিন যার একদিকে মাথা আর একাধিক লেজ আছে।
তারপর আপনি যদি সেই মুদ্রাটিকে ঘুরাতে থাকেন তাহলে এর মাথা এবং লেজ একই সাথে ঘুরবে আবার থামালে মাথা আর লেজ আলাদা আলাদা হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনি মুদ্রাটি ঘূর্ণন অবস্থায় বুঝতে পারবেন না কোনটি মাথা কোনটি লেজ।
এরকম ঘুরানো মুদ্রার মতো হচ্ছে সুপার পজিশন। আর কিউবেট সুপার পজিশনের থাকে বলে এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে আরো বেশি শক্তিশালী করে তোলে। কিউবিট গণনা করার সময় অনিশ্চিতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে পারে।
সাধারণ কম্পিউটারের যদি কোন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে চান তবে এটি ধাপে ধাপে সমাধান করবে এবং সমাধান না করা পর্যন্ত ঘুরতে থাকবে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার একেবারে সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবে।
যদি আপনি একটি গল্প লেখেন এবং গল্পের শেষে নায়কের চরিত্রটি মারা যায় তাহলে আপনি আবার প্রথম থেকে গল্পটি লিখতে পারেন যেখানে নায়ক চরিত্রটি মরেনি। কিউবিটস অন্য আরেকটি উপায়ে কাজটি করতে পারে যাকে entanglement বা জালে জড়িয়ে পড়া বলা হয়।
আপনি যদি দুটিএক টাকা পয়সা ফ্লিপ করেন তাহলে একটিতে শাপলা অন্যটিতে মানুষ আসতে পারে। তবে entanglement এর ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন জায়গায় থাকলেও তারা একসাথে সম্পর্কযুক্ত। এক থেকে যদি শাপলা আসে তাহলে অন্যটিতে তাই হবে। শুনতে অনেকটা জাদুর মতো মনে হচ্ছে তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান এখনো বুঝে উঠতে পারেনি এটা কিভাবে হচ্ছে বা কিভাবে কাজ করছে এটি।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিশেষ গুন হচ্ছে অনিশ্চয়তা রয়েছে এমন অবস্থায় কি হতে পারে তা নির্ণয় করতে পারবেন।
আপনি সেই গন্যা আমার পয়সার মতো করে জটিল গণনা সম্পাদন করতে পারবেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার কাজে লাগিয়ে। আর যদি একাধিক কিউবেট একসাথে স্ট্রিং করানো যায় তাহলে এমন সব সমস্যাগুলো সমাধান করা যাবে যা সমাধান করতে বর্তমানের সুপার কম্পিউটার গুলোর কয়েকশো বছর লেগে যাবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা
কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে যে শুধু দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে কাজ করা যাবে বিষয়টা এর চেয়েও বড় কিছু। কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে এমন সব কাজ করা যাবে যা আমরা স্বপ্ন ভাবতে পারি না। তাছাড়া এমন গণনাগুলো করে দিতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেগুলো বর্তমানে সেরা সুপার কম্পিউটার করতে পারবে না। এই কম্পিউটারটি আরো বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। চালকবিহীন গাড়ির সফটওয়্যার উন্নতি করতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার মডেলিং গুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বর্তমানে সুপার কম্পিউটারগুলো প্রাথমিক অনু বিশ্লেষণ করতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুলো পরমাণুর ভিতর অনুগুলো যে পদ্ধতিতে কাজ করে একই পদ্ধতিতে এই কম্পিউটার কাজ করতে সক্ষম তাই জটিল বিক্রিয়াগুলো বুঝে উঠতে এবং পরিচালনা করতে কোন সমস্যা হয় না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আরও উন্নত পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির জন্য আরো ভালো মানের উপকরণ তৈরি, সস্তা এবং কার্যকর ওষুধ তৈরি, আরো বেশি শক্তিশালী সৌর প্যানেল তৈরি ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে। এগুলো ছাড়াও শেয়ার বাজারের পূর্ব আভাস দেওয়া, আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রযুক্তি উন্নতি করা, এমনকি কোয়ান্টাম ফিজিক্স বোঝার জন্য কন্টেন্ট কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যাবে। সাংকেতিক লিপি বা ক্রিপটোগ্রাফি বোঝার জন্য এটি কাজে লাগবে।
আমাদের পাসওয়ার্ড সিস্টেম বিশাল সংখ্যক প্রাইম সংখ্যার বিভক্তি হওয়ার উপর নির্ভর করে থাকে যাকে ফ্যাক্টরিং বলা হয়। সাধারণ কম্পিউটারের মাধ্যমে কোন কিছুর পাসওয়ার্ড বের করা সময় সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং কঠিন। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই কাজগুলো অতি সহজেই করতে পারবে।
যার ফলে আমাদের সকল ডাটা ঝুঁকিতে পড়বে। এর থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে কোয়ান্টাম পদ্ধতিতে ডাটা স্টোর করা। কোয়ান্টাম কম্পিউটার থেকে যদি কেউ তথ্য চুরি করে তাহলে মূল তথ্যের অনুরূপ হবে না। যার ফলে চুরি করা পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ চুরি করার মত কাজ করতে পারবে না।
ন্যাশনাল আইডি সার্ভার থেকে যদি কারো আঙ্গুলের ছাপ এবং অন্যান্য তথ্য হ্যাক করতে চায় সেটাও করতে পারবেনা হ্যাকাররা। মোটকথা কোয়ান্টাম এনক্রিপশন কেউ কপি করতে পারবে না তাই কেউ হ্যাকও করতে পারবে না।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার যখন পুরোপুরি ভাবে তৈরি হবে তখন ওষুধ শিল্প থেকে তেল শিল্প সবখানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিজ্ঞানের জটিল গাণিতিক সমস্যাগুলো খুব দ্রুত সমাধান করার যাবে।
রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। মহাকাশ বিদ্যায়ও ব্যাপক উন্নতি হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীতে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অসুবিধা
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের এত এত সুবিধার মধ্যে কিছু অসুবিধা বা ঝুঁকিও রয়েছে। উন্নত কোয়ান্টাম কম্পিউটার যখন তৈরি হবে তখন প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যবস্থার যাবতীয় সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে। এই কম্পিউটার যার হাতে থাকবে সে চাইলেই অনেক কিছু করতে পারবে। সারা বিশ্বের মানুষ এখন ইন্টারনেট নির্ভর আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে বিলিয়ন বিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা যাবে।
সরকারি, বেসরকারি, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার সকল ডাটাবেজ এই কম্পিউটারের মাধ্যমে মুহূর্তে হ্যাক করা যাবে। যেকোনো দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চাইলেই নিজের আয়ত্তে আনা যাবে, অচল করে দেওয়া যাবে। এইসব দিক বিবেচনা করলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কোন তথ্য গোপন রাখা সম্ভব হবে না। ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে যখন সুপার কম্পিউটারকে একটি সাধারণ যন্ত্র মনে হবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কবে ব্যবহার করতে পারবো
কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কোয়ান্টাম চিপ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কয়েক দশক ধরে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তাত্ত্বিক কাগজের রূপে আছে। এর কারণ হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার অবিশ্বাস্য রকম সংবেদনশীল সামান্য কিছুর প্রভাবে সুপার পজিশনের সূক্ষ্ম অবস্থা থেকে একটি কিউবিট ছিটকে যেতে পারে।
অতিমাত্রায় সংগঠনশীল হওয়ায় এটিকে সমস্ত বৈদ্যুতিক আবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে এবং -২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কাছাকাছি তাপমাত্রায় রাখতে হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সাধারণ মানুষদের ব্যবহারের জন্য নয়। এটি শুধুমাত্র একাডেমিক এবং ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত হবে।
তবে যারা এ কম্পিউটার ব্যবহারের অনুমতি পাবে তারা দূর থেকে ব্যবহার করতে পারবে।