ডেটা বলতে তথ্যকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ এইযে আপনি সারাদিন কি কি করলেন। একটু ভাবুন তো! সকালে ঘুম থেকে উঠলেন, তারপর ফ্রেস হইলেন, তারপর সকালের নাস্তা খাইলেন। তারপর আরো কত কি করলেন। ফেসবুক, ইউটিউব. গুগল, ফোনকল ইত্যাদি আরো কত কি। আর এইগুলো সবই হলো ডেটা বা ডাটা। কোনটা আপনার মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয় আবার কোনটা মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়। পার্থক্য শুধু এটাই।
তাহলে কি বুঝলেন, ডেটা হলো এক ধরনের তথ্য ও উপাত্ত। যার অর্থ ইংরেজীতে বুঝায় (Value)
যেমন বিভিন্ন ধরনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, স্কুল বা কলেজে নাম ডাকার জন্য একটি হাজিরা খাতা থাকে যেখানে আমদের সকলের নামের তথ্য থাকে। আবার কোন কোম্পানিতে তাদের কর্মীদের পে-রোল তৈরি করার জন্য নাম, বেতন, পদবি ইত্যাদি হল ডাটা। ডাটা বিভিন্ন ধরনের বা বিভিন্ন ভাষার হতে পারে।
আবার কম্পিউটারের বিভিন্ন ডেটা থাকে, আর কম্পিউটারকে এধরনের ডাটা বোঝার উপযোগী করার জন্য মেশিন কোডে বা কম্পিউটারের ভাষায় রূপান্তরের ব্যবস্থা থাকে।
ডেটা কত ধরনের হয়
ডাটার সাধারনত ৩ প্রকার
- ১. নিউনিউমেরিক ডাটা (Numeric Data)
- ২. বুলিয়ান ডাটা (Boolean Data)
- ৩. নন-নিউমেরিক ডাটা (Non-Numeric Data)
৩টি ধরন সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
নিউমেরিক ডাটা
নিউমেরিক ডাটা হচ্ছে সেকল ডাটা যা শুধু মাত্র সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ ১, ৪০০, ২৫, ৫০০ ইত্যাদি। কোন প্রোগ্রাম লিখতে গিয়ে যখন আপনি কোন সংখ্যা ইনপুট করেন, তখন সেটা হয় নিউমেরিক ডাটা।
বুলিয়ান ডাটা
বুলিয়ান ডাটা টাইপকে অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় লজিক্যাল ডাটা টাইপ। কারণ এই ডাটা সাধারণত True কিংবা False এই দুইটা ফর্মে থাকে।
নন-নিউমেরিক ডাটা
নন-নিউমেরিক ডাটা হচ্ছে সেসব ডাটা যাদের আমরা চাইলে ও কোন সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না। আমরা যখন কোন জিনিসের পরিমান, সংখ্যা ইত্যাদি প্রকাশ করি তখন আমরা নিউমেরিক ডাটা ব্যবহার করি। আবার কিন্তু যখন কোন বস্তুর কোয়ালিটি, দোষ, গুন, ভাবভঙ্গিমা কিংবা অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে হয় তখন সেটা করা হয় শুধু মাত্র নন-নিউমেরিক ডাটা ব্যবহার করেই সম্ভব।
ডেটা সম্পর্কিত কিছু বৈশিষ্ট্য
১) ডাটা অনেক বিশাল পরিমাণে হতে পারে – আর তাই এসব ডাটা অ্যানালাইসিসের জন্য আমাদের ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কে বিস্তর ধারনা রাখতে হবে।
২) হাই ডাইমেনশনালিটি – এ ধরনের ডাটা প্রকৃতপক্ষে হাজার হাজার ডাইমেনশন সম্পন্ন হয়ে থাকে।
৩) খুব জটিল প্রকৃতির – যেমন সেন্সর ডাটা, বিভিন্ন ডাটা স্ট্রিম, টাইম সিরিজ ডাটা, টেম্পরাল ডাটা, সিকোয়েন্স ডাটা ইত্যাদি ধরনের হয়ে থাকে। এবং মাল্টিমিডিয়া ডাটা, টেক্সট বা ওয়েব ডাটা ইত্যাদি ডেটা গুলো খুব জটিল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
ডেটা সম্পর্কে মজার তথ্য
ইন্টারনেট যেদিন থেকে তৈরি হলো এবং সর্বপ্রথম যার দ্বারা ইন্টারনেট ধারনাটি আমাদের সকলের মাঝে বিকাশ ঘটলো, সেদিন থেকেই এই ডেটা আদান-প্রদানের মাত্রা অবিশ্বাস্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মানবজাতির সকল সংগ্রহীত ডাটার পরিমাণ কেমন হতে পারে? কল্পনা করুন তো? আমি নিশ্চিত যে হুবহু বলতে পারবেন না।
তাহলে আন্দাজ করে বলুন। যদি ২০০৩ সাল পর্যন্ত হিসেব করা হয় তাহলে আমাদের জমাকৃত ডাটার পরিমাণ হবে প্রায় ৫ বিলিয়ন গিগাবাইট। বর্তমানে ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে প্রতিদিন ডাটার পরিমাণ না হয় আর হিসেব করি। আর হিসেব করলে আপনার মাথা ঘুরে যেতে পারে।
প্রতিদিন যে কত পরিমানে ডাটা আদান-প্রদান বা আপলোড হইতেছে তা আন্দাজ করলে আগের তুলনায় কয়েকগুণ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবার আলোচনা করা যাক মূল ডাটা সম্পর্কে যেটা দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি।
ফাইবার ক্যাবল কি
ফাইবার ক্যাবল মূলত কতগুলো ফাইবারের সমন্বয়ে তৈরি হয়। অপটিক্যাল ফাইবার ডাটাকে আলোক সংকেতে রূপান্তরিত করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আলোর গতিতে স্থানান্তর করে। বর্তমানে ফাইবার প্রধানত ইন্টারনেটের কাজে এবং ডাটা ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে কিভাবে ডাটা প্রবাহিত হয়
ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ডাটা প্রবাহিত হয় আলোর গতিতে, অর্থাৎ আলো যত দ্রুত গতিতে চলতে পারে ফাইবার সেই গতিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ডাটা স্থানান্তর করে থাকে।
অপটিক্যাল ফাইবার কাচ বা প্লাস্টিকের তৈরী এক প্রকার ডাই_ইলেকট্রিকপদার্থ দিয়ে তৈরি এবং যা আলো পরিবহনে পুরোপুরি সক্ষম। এবার আসি আসল কথায়, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে মূলত ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল এর পরিবর্তে আলোক সিগন্যাল ট্রান্সমিট করা হয়।
আর সে সিগন্যালকে রিসিভ করে পুনরায় ডেটায় পরিণত করার জন্য অপরপ্রান্তে ডিভাইস সংযুক্ত থাকে। ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে অনেক উচ্চ গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট বা স্থানান্তর করা যায়।
বর্তমানে ইন্টারনেট বা ব্রডব্যান্ড লাইন গুলোতে ফাইবার ক্যাবলের ব্যবহার অত্যাধিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে পূর্বের তুলনায় ইন্টারনেট স্পিড বেশি পাওয়া যায়।
মোবাইল ডাটা কিভাবে কাজ করে?
মূলত আমরা যত প্রকার সিমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি সেখানে কোনো প্রকার মোবাইল ডাটা খরচ হয় না। আমরা আমাদের সিমে যতোটুকু ডাটা দেখতে পাই সেটি মূলত সেই পরিমান একটি লিমিট দেওয়া থাকে, অর্থাৎ আপনি কতটুকু ডাটা ব্যবহার করতে পারবেন সেটাই উল্লেখ থাকে।
আমরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে যত ডাটা ব্যবহার করি সেটা তারা শুধু লিমিট সেট করে দেয়, কারণ তারা যেই টাকা প্রদান করে সেই ডাটা তাদের হাতে থাকে না।
মূলত আমরা বিভিন্ন অপারেটরের সিম গুলোর মাধ্যমে যে ডাটা ব্যবহার করি সেগুলো কম্পিউটারে স্টোরেড করা ফাইল, যেগুলো আপনি এবং আমি ব্যবহার করে থাকি। মূলত সার্ভার থেকে স্টোরেড ফাইলগুলো মোবাইল ডিভাইসে পার করার জন্য ইন্টারনেট মোবাইল ডাটার মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
পৃথিবীতে ইন্টারনেট ডাটা না থাকলে কি হবে?
পৃথিবীতে ইন্টারনেট ডাটা না থাকলে পূর্বের দিনগুলোর মতো চিঠি এবং ফ্যাক্স মেশিন যুগে ফিরে যেতে হবে। আর তাছাড়া তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা সৃষ্টি হবে পৃথিবীতে ইন্টারনেট ডাটা না থাকলে। পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য খুজে পাওয়া যাবেনা শিক্ষা ও বিনোদনের জন্য, কারণ ইন্টারনেট না থাকলে গুগল ও ইউটিউব ব্যবহার করা শুধুমাত্র একটি চিন্তা।
পৃথিবীতে ইন্টারনেট না ডাটা না থাকলে লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার বেকার হয়ে পড়বে, ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে যাবে, বিটকয়েন বা ক্রিপ্টো কারেন্সির পতন ঘটবে, বিশ্ববাণিজ্য বিশাল পরিবর্তন আসবে ও অনেক বড় প্রভাব পড়বে, আন্তর্জাতিক ট্রানজিট ও বিমান যোগাযোগ ব্যাহত হবে, পণ্য সরবরাহে খরচ অনেক পরিমাণে বেড়ে যাবে।
অর্থাৎ ইন্টারনেট ছাড়া যে সকল কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার হতো সেই সকল প্রত্যেকটি কাজ অচল হয়ে পড়বে। পৃথিবীতে অনেকাংশই বর্তমানে ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে গেছে তাই পৃথিবীতে ইন্টারনেট ডাটা না থাকলে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বে মানুষ।
প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছে এখনো। বলা যায় পৃথিবীতে ইন্টারনেট ডাটা না থাকলে একমাত্র সেই সকল মানুষগুলো ভালো থাকবে। কারণ তারা জানে না ইন্টারনেট পৃথিবীতে কি এবং কিভাবে তা ব্যবহার করতে হয়।
বাংলাদেশে বসে আপনি কিভাবে আমেরিকাতে কথা বলতে পারেন?
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, মোবাইল ডাটা ও মোবাইলের ব্যালেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে আমেরিকাতে কথা বলতে পারেন।