শ্রমিক মৃত্যুর অজুহাতে কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক ইত্যাদি ইউরোপের ভন্ড, দুইচোখা, মিথ্যাবাদী মানবতার দেশগুলো।
আপনি কি জানেন? ফ্রান্স দীর্ঘ ১৩০ বছর যাবৎ আলজেরিয়া দখল করে ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। তারপর মুসলিম নেতাদের মাথা কেটে ফ্রান্সের জাদুঘরে এনে যুগের পর যুগ ধরে প্রদর্শন করছে। সেই ফ্রান্স যদি মানবতার কথা বলে তখন এটা কথাটা শুনতে কতটা খারাপ লাগে তা একবার ভাবুন। কাতারের স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে যে সকল শ্রমিকরা মারা গেছে তাদের জন্য ফ্রান্সের কিছু মানুষ কাতার দূতাবাসের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ করছে এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু এই ফ্রান্স যখন আফ্রিকায় গিয়ে মানুষ হত্যা করছে, নির্যাতন করছে তখন তাদের প্রতিবাদের কথা মনে থাকে না।
আরেক ভন্ড মানবতাবাদী ইতালি ৩৩ বছর ধরে লিবিয়া দখল করে লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে, সেখান থেকে সম্পদ লুট করে নিজেদের দেশকে ধনী বানিয়েছে, তারাই এখন শ্রমিক মৃত্যুর অজুহাতে কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দেয়। একেই বুঝি বলে চোরের মার বড় গলা।
ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানি ২ বিশ্বযুদ্ধের মিলিয়ে কয়েক কোটি মানুষকে হত্যা করেছে, তারাও এখন মানবতার কথা বলে কাতারের বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দেয়। চালুন যদি নিজের হাজারো ছিদ্র রেখে শুইয়ের একটা ছিদ্র নিয়ে কথা বলে তাহলে এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে। জার্মানির ফুটবল লিগের ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড তাদের মাঠে বড় করে ব্যানার লাগিয়েছে বয়কট কাতার বিশ্বকাপ।
ইউরোপের দেশগুলো আমেরিকার সাথে মিলে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে গত দুই যুগ ধরে কত কোটি মানুষকে হত্যা করেছে, কত মুসলিম মা-বোনের ইজ্জত হরণ করেছে তার কোনো হিসাব নেই। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো কাতার স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে শ্রমিক হত্যার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু এই মিথ্যাবাদী ভন্ড মিডিয়াগুলো মুসলিম দেশে মানুষকে পশু পাখির মতো গুলি করে হত্যা করার সময় চুপ থাকে।
কাতারের স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনাবসত কিছু মানুষের মৃত্যু বরণ করেছে। আর এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ড ছিল না, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা নিয়ে পশ্চিমাদের এত জালা তাহলে একবার ভাবুন তারা যে গত ২০০ বছর ধরে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে তাদেরকে কি করা উচিত।
কাতার বিশ্বকাপে তাদের এত সমস্যার মধ্যে আরেকটি হচ্ছে তারা সেখানে গিয়ে সমকামিতার মত জঘন্য কাজ করতে পারবে না। সমকামিতার মত অত্যন্ত অশ্লীল জঘন্য নিকৃষ্ট কাজ কাতারে কেউ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর এর ফলে পশ্চিমার নেতারা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও কাতার এই ব্যাপারে ছিল অটল।
কাতারের আমির শেখ তামিম পশ্চিমাদের এই জঘন্য অপরাধকে শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন এবং তাদের আপত্তি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন কাতার একটি স্বাগতিক উদার রাষ্ট্র। বিশ্বের মানুষের সাথে কাতারের সংস্কৃতির পরিচয় করার জন্য বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে এই ফুটবল বিশ্বকাপ। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা কোনো মানুষকে এখানে আসতে এবং ফুটবল উপভোগ করতে বাধা দিব না। তবে আমরা একই পৃথিবীতে বসবাস করলেও আমাদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে। এজন্য সবাইকে স্বাগত জানালেও, আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি তারা আমাদের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করবে এবং মেনে চলবে।
কাতারের আমির তার বক্তব্যে আরও বলেন, বিশ্বকাপে আগত দর্শকদের জন্য কাতারের সমকামিতা বিরোধী আইন মেনে চলতে হবে এবং এটা বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বলেন, বিশ্বকাপ চলাকালীন সমকামী অশ্লীলতা প্রতিরোধের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে যারা কাতারের সমালোচনায় লিপ্ত জার্মান নেতাদের উপহাস করে তিনি বলেন, কাতার থেকে যখন তেল-গ্যাস নেওয়ার প্রয়োজন ছিল অথবা আফগানিস্থানে আটকে পড়া জার্মান সৈন্যদের তালেবানের হাত থেকে উদ্ধারের প্রয়োজন ছিল তখন জার্মানরা নতজানু হয়ে কাতারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এখন স্বার্থ শেষ হওয়ার পর তারা কাতারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জার্মান নেতাদের এই দ্বিমুখী চরিত্র নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে রীতিমতো উপহাস করেছেন কাতারের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষেরা বলছেন কাতারের শ্রমিক দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমাদের অধিকার তখনই থাকতো যদি তারা সব জায়গায় এবং সবার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকতো। আপনি কি জানেন আমেরিকা গত ৭৩ বছরে ৩ কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। অথচ দেখবেন তারাই সারা বিশ্ব মানবতার কথা বলে বেড়াবে। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী দেশ হচ্ছে আমেরিকা। পশ্চিমাদের হাত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়ে আছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে এই পশ্চিমারা আর তাদের মুখে মানবতার কথা একদমই মানায় না।
এই যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমাদের মানবতা টগবগিয়ে উঠেছে, জেগে উঠেছে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ প্লেকার্ড হাতে নিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক যুগ ধরে মুসলিম দেশগুলোতে আমেরিকা ও ইউরোপীয়রা মিলে যে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে আসছে ওই সময়ে তাদের মানবতা ঘুমিয়ে থাকে। বাবটা এমন পশ্চিমারাই মানুষ, আর বিশ্বের আর কোন দেশে মানুষ থাকে না তারা সবাই পশুপাখি। তাদের মা*রবো, কা*টবো, ধর্ষণ করবো কেউ বলার নেই, কেউ দেখার নেই। সেই সময় পশ্চিমা মিডিয়া গুলো অন্ধ হয়ে থাকে।
পশ্চিমার মিথ্যাবাদী মিডিয়া এবং পশ্চিমার এই সন্ত্রাসী দেশ গুলো সব সময় আমাদেরকে রঙিন চশমা পড়িয়ে বোকার স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। বিশ্বের যত রকমের নিকৃষ্ট, জঘন্য, অশ্লীল, পশুসুলভ কর্মকাণ্ড আছে সব এই পশ্চিমাদের আবিষ্কার। এই খুনি ও চোরেরা যখন মানবতা নিয়ে কথা বলে তখন আসলেই ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর।