শীতকাল পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্য বছরের একটি কঠিন সময়। আমাদের দেশে বেশি শীত পড়লে অনেক কুয়াশা হয় কিন্তু তুষারপাত হয় না। তবে বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে তুষারপাতের কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
তুষারপাতের কারণে ঘর থেকে বাহির হওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের যত শীতই পড়ুক কোনদিন তাপমাত্রা মাইনাসে যায়নি। তবে বাইরের দেশগুলোতে বিশেষ করে ইউরোপে প্রতিবছরের শীত আসলে তাপমাত্রা মাইনাসে চলে যায়।
আমাদের দেশের অনেক মানুষ দেশের বাইরে অবস্থান করছে। প্রবাসী অনেক ভাই ও বোনেরা যেখানে অবস্থান করছে হয়তো সেখানে প্রচন্ড শীত এবং তুষারপাত হয়। আপনাদের জন্য আজকের আর্টিকেল। প্রচন্ড শীত যেখানে তাপমাত্রা মাইনাসে (-) সেখানে কিভাবে সারভাইব করবেন সেটা নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
প্রচন্ড শীত এবং তুষারপাতে ভালো থাকার জন্য কিছু টিপস
সূর্যের আলো ব্যবহার করা
শীতকালে সাধারণত প্রতিদিন সূর্যের আলোর দেখা পাওয়া যায় না। প্রচন্ড কুয়াশা এবং তুষারপাতের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। তবে যখনই সূর্যের আলো পাবেন তখন সূর্যের আলোতে নিজেকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন। রোদের মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে আপনার শরীর এমনিতেই উষ্ণ হয়ে যাবে।
কয়েক স্তরে পোশাক পড়ুন
মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢাকার জন্য কয়েক স্তরের পোশাক করতে হবে। প্রথমে লং জনস (Long Jhons) পড়ে নিন। তার উপর শার্ট বা টি-শার্ট এবং ট্রাউজার বা প্যান্ট পড়ুন। হাতে এবং পায়ে মোজা পড়ুন। মাথায় কান টুপি ব্যবহার করুন। মুখ ঢাকার জন্য মাফলার/স্কার্ফ ব্যবহার করুন। এভাবে কয়েক স্তরের পোশাক পড়ে তবে ঘর থেকে কাজের জন্য বের হবেন তাহলে শীতের ঠান্ডা আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
মোজা ব্যবহার করা
ঘরের ভিতরে অথবা বাইরে সব জায়গায় হাত মোজা এবং পা মোজা পড়তে হবে। আপনার সাথে সবসময় একজোড়া অতিরিক্ত মোজা রাখার চেষ্টা করুন। কারণ তুষারপাতের কারনে মোজা ভিজে গেলে তখন শুকনো মোজা ব্যবহার করতে পারবেন। মৌজা পড়ে তার উপর হ্যান্ড গ্লাভ পড়তে পারেন।
খাবার নষ্ট করা যাবে না
প্রচন্ড তুষারপাতের কারণে যখন ঘর থেকে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন আপনি তো প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন কিনতে যাবে না।
কয়েক দিনের খাবার একবারে কিনে আনতে হবে। আবার খাবার দু’একদিন বাকি থাকতে আগামী কয়েক দিনের খাবার ক্রয় করতে হবে। কিন্তু যদি এমন হয় আপনার খাবার শেষ কিন্তু কোনভাবেই বাইরে যাওয়ার সম্ভব হচ্ছে না। তখন কী হবে?
তাই শীতের দিনে খাবার নষ্ট করা বা ফেলা যাবে না। আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য যতটুকু খাবার লাগবে ঠিক ততটুকুই রান্না করুন। কোনমতে খাবার পচানো বা বাসি বা পুড়ানো করা যাবে না।
ত্বকের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে
শীতের সময় ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। বাজারের বিভিন্ন কোম্পানির মশ্চারাইজার ক্রিম পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করে নিজের ত্বককে সুন্দর ও কোমল রাখার চেষ্টা করুন। ঠোঁটে, মুখে, হাতে, পায়ের পাতা ও গোড়ালিতে আলাদা যত্ন নিতে হবে। তার জন্য লোশন ও পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন।
শীতে প্রচন্ড ঠান্ডায় নিয়মিত গোসল করা
শীতকালে যখন প্রচন্ড ঠান্ডা হয় তখন অনেকেই আমরা গোসল করতে চাই না। প্রচন্ড ঠান্ডায় হালকা গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করতে হবে। নিয়মিত গোসল করলে আপনার শরীর ঠান্ডা অনুভূতি কম লাগবে।
তুষারপাতের সময় গাড়ি চালাতে হবে সাবধানে
গাড়ির গায়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিটিয়ে দিতে পারেন কারণ এটি জীবনুকে হত্যা করার পাশাপাশি হিমাঙ্ককে কমিয়ে দেয়। এর ফলে গাড়ির উপর থাকা বরফ গলতে পারে। গাড়িতে যেন তুষার আটকে না যায় সেজন্য কিছু যন্ত্রপাতির সাথে রাখতে পারেন।
শক্ত প্লাস্টিকের কার্ড অথবা লোহার পাতলা লম্বা পাতের খণ্ঠ রাখতে পারেন যেগুলোর সাহায্যে গাড়িতে আটকে থাকা তুষার আপনি ঘষে তুলতে পারেন। তাছাড়া আগুন ধরানোর মতো কিছু সাথে রাখতে পারেন। বেলচা জাতীয় কিছু যন্ত্রপাতিও সাথে রাখতে পারেন।
শুকনো খাবার বা ড্রাই ফুড জাতীয় খাবার গাড়িতে কোথাও যাওয়ার সময় সাথে ক্যারি করতে পারেন।
যোগাযোগের জন্য ভালো ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা
ভারী তুষারপাতের কারণে অনেক সময় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সব বরফে ঢেকে যায়। সেই সময় খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সেই সময় সাহায্য চাওয়ার জন্য মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট হবে যোগাযোগ করার একমাত্র মাধ্যম। কারণ ভারী তুষারপাতে বাসা থেকে বের হওয়ার মত কোন পরিবেশ থাকবে না।
ভিন্নভাবে হাঁটতে শিখুন
সাধারণত তুষারপাতে রাস্তাঘাট বরফে ঢেকে যায়। আর বরফের যদি আপনার স্বাভাবিকভাবে হাঁটেন তাহলে পড়ে যেতে পারেন। তাই বরফের উপর নিরাপদে হাঁটতে হলে পেঙ্গুইনের মত হাঁটতে হবে।
বরফ এবং তুষারের উপর নিরাপদে হাটতে কিছু টিপস
হাতে গ্লাবস পরুন যেন আপনার হাত পকেটে ঢুকানো না লাগে। আর হাত বাইরে থাকলে আপনি আপনার ব্যালেন্স রাখতে পারবেন। তাছাড়া গ্লাবস আপনার হাতকে প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা করবে।
যদি আপনার জরুরী কিছু জিনিসপত্র সাথে নেওয়া লাগে তাহলে একটি ব্যাগ (ব্যাকপ্যাক) ব্যবহার করুন। যদি আপনি হাতে কোনো কিছু বহন করেন তাহলে আপনার বরফে উপর দিয়ে হাঁটতে সমস্যা হবে।
বাইরে বের হওয়ার সময় এরকম রাস্তা বেছে নিন যেখানে মানুষের আনাগোনা থাকে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে কোথাও না যাওয়া ভালো।
সব সময় সু জুতা বা বুট জুতা পড়ে বাসা থেকে বের হতে হবে। এরকম জুতার পড়বেন যেগুলোর নিচে দিয়ে একবারে সমান নয় কাটাকাটা অথবা ছোট ছোট হিল রয়েছে।
আর তুষার বা বরফের উপর স্বাভাবিক ভাবে না হেটে পেঙ্গুইনের মত হাঁটতে হবে তাহলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। আর হাঁটার সময় তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে হাঁটার চেষ্টা করবেন।
বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কত?
২০১৮ সালে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আর এটা ছিল ৭০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।