বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটি পরিবারে একটি স্মার্টফোন রয়েছে। আর সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা তো রয়েছেই। বর্তমানে অনেকেই অনলাইনে অনুসন্ধান করে জানতে চায় কোন রোগের কি ওষুধ এবং বিভিন্ন রোগের ওষুধের নাম সম্পর্কে। আর এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে কোন রোগের কি ওষুধ এবং কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের ওষুধের নাম জানতে পারবেন।
পৃথিবীর সকল মানুষই কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগের চিকিৎসার জন্য সারা দুনিয়ায় হাজার হাজার ডাক্তার এবং লক্ষ লক্ষ ঔষধ রয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য রয়েছে অসংখ্য হাসপাতাল। আর এই সবকিছু থাকার কারণ হলো অসংখ্য রোগের জন্য। কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলো সাধারণ রোগ অল্প কিছু মেডিসিন নিলে ভালো হয়ে যায় আবার কিছু রোগ আছে যেগুলো মরণব্যাধি রোগ।
আমাদের কোন শারীরিক সমস্যা হলে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিসমিশারি বা হাসপাতাল থেকে ওষুধ কিনে সেবন করে থাকি। তবে কিছু কিছু রোগ বা সমস্যা আছে যেগুলো কমন প্রায় প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সমস্যাগুলো নানান সময় দেখা দেয়। যেমনঃ জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি, চুলকানি, শরীরের কোথাও হালকা কেটে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
বর্তমান সময়ে মানুষ সাধারন রোগগুলোর ওষুধ সম্পর্কে কমবেশি অবগত থাকে। তাছাড়া ইন্টারনেটের যুগে একটু নেটে ঘাটাঘাটি করলে সাধারণ সমস্যার ওষুধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন সবাই কমবেশি ই-চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। তাছাড়া আমাদের দেশের প্রতিটি গ্রামে এখন ওষুধের দোকান অ্যাভেলেবল। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে যেখান থেকে চিকিৎসা বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
কোন রোগের জন্য কি ওষুধ
প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে। আপনি সরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে গেলে মনে হবে দেশের সকল মানুষ রোগী।
ওষুধের টিকেটের জন্য লম্বা লাইন, ডাক্তার দেখানোর জন্য বিশাল লাইন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য লাইন। মানুষের ভিড়ে হাসপাতালের ভিতরে পা রাখাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
তাই অনেকেই আমরা সাধারণ রোগের জন্য হাসপাতালে ভিড় না জমিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই কোন রোগের জন্য কোন ওষুধ তা জেনে সেবন করে থাকি। সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
গুগল প্লে স্টোরে “কোন রোগের কি ওষুধ রোগ ও ওষুধ” নামে একটি অ্যাপ পাবেন যেটার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোন রোগের কি ওষুধ। এখনি গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।
বিভিন্ন রোগের ওষুধের নাম
জ্বরের ঔষুধ
জ্বর- প্যারাসিটামল/নাপা/এইস (তবে যদি ২-৩ দিনের মধ্যে জ্বর ভালো না হয় এবং জ্বর ১০৫ ডিগ্রির উপরে উঠে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে)
সর্দি বা ঠান্ডা ঔষুধ
সর্দি বা ঠান্ডা- হিস্টাসিন/হিস্টালেক/ফেক্সো/ডেসলর/এইস প্লাস
জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম
সেফট্রিয়াক্সোন (ইনজেকশন), সেফিক্সিম (ক্যাপসুল), সেফুরক্সিম + ক্লাভুলানিক এসিড, সিপ্রোফ্লক্সাসিন , এজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে জ্বর হলে সাধারণত এই অ্যান্টিবায়োটিক গুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। জিম্যাক্স ২৫০ মি.গ্রা./৫০০ মি.গ্রা. এটি একটি জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করবেন না।
পেইনকিলার বা ব্যথা নাশক ট্যাবলেট এর নাম
- কোন রকম ঝুঁকি ছাড়াই ট্রামাডল (Tramadol) পেন কিলার হিসেবে নিতে পারেন।
- পেট ব্যথার ঔষুধ (গ্যাস্ট্রিকের কারণে ব্যাথা হলে) – ইসোমিপ্রাজল ক্যাপসুল ২০/৪০ মি.গ্রা., অ্যালজিন ট্যাবলেট ৫০ মি.গ্রা., ট্রিপটিন ১০ মি.গ্রা.।
- কোমর ব্যথার ঔষুধ (দীর্ঘদিন ভারী বাড়ির কাজ এবং বসে কাজ করার ফলে)- অ্যাসিক্লোফেনাক ট্যাবলেট ১০০ মি.গ্রা., ক্যালসিয়ামের ওষুধ এবং গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ।
- রগের ব্যথার ঔষুধ- প্রিগাবালিন ৫০ মি.গ্রা., এমিট ১০ মি.গ্রা.।
- দাঁতের ব্যথার ঔষুধ- ইটোরিকক্সব/এমোক্সিসিলিন/সাফারডিন/সেফুরক্সিম (তাছাড়া সিভিট জাতীয় ট্যাবলেট মেট্রিল ৪০০ মি.গ্রা.)
- কানের ব্যথার ঔষুধ- ইটোরিক্স ৯০-১০০ মি.গ্রা./ সেফুরক্সিম ২৫০-৫০০ মি.গ্রা. (ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কানের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন)
- হাঁটুর ব্যথার ঔষুধ- এসিক্লোফেনাক/ইন্ডোম্যাথাসিন (সাথে ক্যালসিয়াম ও নিউরোভিটামিন ট্যাবলেট)
- বাত ব্যথা, অর্থ্রাইটিস, সয়াটিকা, অস্ট্রিওপেরোসিস ইত্যাদি কারনে হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে।
- বুকে ব্যথার ঔষধ- ফ্রেনজিট/ট্রিপটিন/ডমপেরডিন (হালকা ব্যথা হলে এসিডিটির ওষুধ সেবন করতে পারেন)
- মাসিকের ব্যথার ঔষধ- ন্যাপ্রক্সেন/ইসোমিপ্রাজল/অ্যালজিন ৫০ মি.গ্রা. (প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গরম পানির সেক দিলে ব্যথা কমে যাবে)
- ঘাড় ব্যথার ঔষধ (ভারী কাজ ও ঘুমের দেখাতে কারণ হলে)- ব্যাক্লোফেন ৫-১০ মি.গ্রা./সুলিনডাক ১০০ মি.গ্রা.
- মেরুদণ্ড বা পিঠের ব্যথার ঔষুধ- ব্যাক্লোফেন ৫-১০ মি.গ্রা./ক্যালসিয়াম ডি ও নিউরো ভিটামিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া উপরের কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
পেইন কিলার ওষুধ খাওয়ার ফলে অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াল দেখা দেয়। তাই ব্যথা জনিত কোনো সমস্যা হলে আগে কি কারণে ব্যথা সেটার সমাধান করতে হবে। ওষুধ খেয়ে আর কতদিন ভালো থাকবেন। আপনাকে বিভিন্ন পুষ্টিকর এবং ভিটামিন যুক্ত খাবার খেয়ে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
- শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে তার ঔষুধ- সিলভার সালফাডায়েজিন (Ascend) মলম পোড়া জায়গায় ব্যবহার করুন।
- পোড়ার ক্ষত শুকানোর ক্রিম বা মলম- বার্না ক্রিম, বেনটোল ক্রিম, বার্নসিল ক্রিম, সিবালিন ক্রিম, জি সিল্ভার সালফাডাইজিন, বার্নাআইডি ক্রিম।
- পোড়ার স্থানের দাগ দূর করার মলম- লেভিসিকা ক্রিম (সিলিকন জেল), মেডারমা ক্রিম, জারজেল ক্রিম ও ভাইট ক্রিম।
রক্তপাত সহ ছোটখাটো কাটা ছেড়ার ঔষুধ- কাটা জায়গায় প্রভিডন আয়োডিন অয়েনমেন্ট ব্যবহার করুন। তাছাড়া পভিসেপ মলমও ব্যবহার করতে পারেন। আর কোথাও কেটে গেলে সর্বপ্রথম রক্তপাত বন্ধ করবেন পরে কাটাযুক্ত স্থান পরিষ্কার করে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
ওষুধ সেবন করার কিছু নিয়ম আছে সেগুলো মেনে আপনাকে ওষুধ সেবন করতে হবে। সাধারণত ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে ওষুধের নিয়ম-কানুন সব লিখে দেন। আপনি ভালোভাবে না বুঝলে পরবর্তীতে ওষুধের দোকান থেকে ফার্মাসিস্ট থেকে ভালোভাবে ওষুধ সেবনের নিয়ম গুলো জেনে নিবেন। যেকোনো ওষুধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
আমাদের বাঙ্গালীদের একটি বদ অভ্যাস আছে আমাদের কোনো রোগ বা সমস্যা হলে আমরা সাথে সাথে সেটার ব্যবস্থা নেই না। কেউ কেউ বলে এমনি ঠিক হয়ে যাবে, আবার কেউ ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে থাকে।
আর এভাবে করতে করতে একটা সময় সেই রোগ বিরাট আকার ধারণ করে। শুরুতে যদি যেকোনো রোগের সঠিক চিকিৎসা নিতে পারেন তাহলে সেই রোগ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যেকোনো সমস্যায় নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করবেন।