গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে সুস্থ থাকতে এমন খাদ্য খেতে হবে যা সহজপাচ্য এবং তরল জাতীয়। আম, জাম, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, লিচু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া লাউ, জালি কুমড়া, পেঁপে, সিম, বেগুন, করলা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি সহজপাচ্য খাবার খাওয়া যেতে পারে।
সাধারণত গ্রীষ্ম কালে প্রচণ্ড গরম পড়ে থাকে। ছোট বড় সকলেই গরমে অস্থির হয়ে যায়। আবার প্রচন্ড এই গরমের কারণে অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা জড়িত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
গরমের সময় খাদ্য তালিকায় সঠিক খাবার রাখতে হবে। আপনার যদি সব ধরনের খাবার খান তাহলে গ্রীস্মের গরমে বিভিন্ন সমস্যা পড়বেন।
প্রচন্ড গরমে সুস্থ থাকতে যেসব খাবার খাবেন
গ্রীষ্ম মৌসুমে যে সকল ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে আম, জাম, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, লিচু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু গরমে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানি দরকার তাই, এক্ষেত্রে তরমুজ এবং বাঙ্গি খেতে পারেন। তরমুজ ও বাঙ্গিতে প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি পানি থাকে। যা আপনার পানির চাহিদা পূরণ করবে। ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করার জন্য কমলা, মাল্টা খেতে পারেন।
এসব সমস্যার মধ্যে পানিশূন্যতা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, জ্বর, ঘামাচি, এলার্জির সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। কাজেই এই মুহূর্তে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে এবং শরীরের যত্ন নিতে হবে সুস্থ থাকতে হলে। এমন খাদ্য খেতে হবে যা সহজপাচ্য এবং তরল জাতীয়।
তাছাড়া লাউ, জালি কুমড়া, পেঁপে, সিম, বেগুন, করলা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি সহজপাচ্য খাবার খাওয়া যেতে পারে। এসকল সব সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা শরীরের পানির ঘাটতি সহজে পূরণ করে। এদের মধ্যে বেশি বেশি করলা খেতে পারেন।
কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া গরমের দিনে সবথেকে বেশি পানি পান করা উচিত। গরমের মধ্যে যদি বেশি বেশি পানি পান করা যায় ততই সুস্থ থাকবেন এবং আপনার স্বাস্থ ও ভালো থাকবে।
তাছাড়া শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস পাতা প্রধান খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন। কারণ এই গ্রিন সালাদ গরমে খুবই উপযোগী খাবার। শসা, টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। যা আপনার দেহের দৈনিক পানির চাহিদা পূরণ করে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
গরমের সময় ইচ্ছেমতো দই খেতে পারেন এবং ডাবের পানিও পান করা যেতে পারে। এবং সবশেষে খাবারের পাশাপাশি দৈনিক অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করবেন, যা প্রথমেই বলেছি। মোটকথা ২ থেকে ৩ তিনি লিটার পানি দৈনিক খেতে হবে।
সবশেষে আপনাকে একটি বাক্যে বলতে চাই প্রোটিন, শর্করা, ভিটামিন যুক্ত খাবার ও পানীয় খেতে হবে গরমকালে সুস্থ থাকার জন্য।
প্রচণ্ড গরমে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
আমাদের দেশের রাস্তাঘাটে বিভিন্ন টং এর দোকান বা হোটেলে ভাজাপোড়া খাবার যেমন সিংগারা, পুরি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, সমুচা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এগুলো যতটা সম্ভব না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করবো। কারণ ভাজাপোড়া অস্বাস্থ্যকর খাবার। আর এগুলোতে প্রচুর তেল ব্যবহার করা হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আমাদের বাঙ্গালীদের মাছ-মাংস ভুনা, খিচুড়ি, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি ছাড়া চলেই না। কিন্তু আপনি যদি গরমকালে সুস্থ থাকতে চান তাহলে আপনাকে এসব খাবার যতটা সম্ভব কম কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এগুলোর পরিবর্তে সাদা ভাত, ঝোল তরকারি ইত্যাদি খেতে পারেন।
রাস্তায় খোলা জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আখের রস, লেবুর শরবত, বিভিন্ন ফল এবং ফলের শরবত পাওয়া যায়। আপনি হয়তো প্রচণ্ড গরমে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর আপনার সামনে এগুলো পড়েছে, আপনার খেতে ইচ্ছে করছে। তাহলে আমি বলবো কষ্ট করে এগুলো না খেয়ে, ফল কিনে বাসায় চলে যান। তারপর বেলেন্ডার দিয়ে জুস তৈরি করে নিজে বানিয়ে খেতে পারেন। এভাবে আপনি অরজিনাল উপকার পাবেন।
গরমের সময় খাবারের পাশাপাশি আপনাকে পোশাকের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। বাড়ি কাপড় এবং কালারফুল জামা কাপড় না পরে হালকা কাপড় এবং হালকা রং এর পোশাক পড়লে আরাম পাবেন। তাছাড়া গরমের সময় খুব বেশি হাঁটাহাঁটি ও শরীরচর্চা, অনেক বেশি পরিশ্রম না করাই ভালো।
বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের কোলড্রিংকস পাওয়া যায়। যেমন সেভেন আপ, কোকোকোলা, পেপসি, ফান্টা,স্প্রাইট, মজো, টাইগার, স্পিড, ম্যাংগো জুস, চাবান পানীয়, গিয়ার ইত্যাদি। এগুলো না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
এসব কোমল পানীয়তে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালযুক্ত থাকে যা আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করছে কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। যদি আপনার খুব বেশি খেতে ইচ্ছে করে তাহলে মাঝেমধ্যে ভালো ব্রান্ডের কোমল পানীয় খেতে পারেন।
গরমের সময় আমরা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বা বরফ পানি খেতে পছন্দ করি। কারণ এটি তাৎক্ষণিকভাবে শরীরকে ঠান্ডা করে এবং প্রশান্তির অনুভূতি দেয়। কিন্তু ঠান্ডা পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আপনি বেশি ঠান্ডা বা বরফ পানি পান না করে হালকা ঠান্ডা পানি পান করতে পারেন।
প্রচণ্ড গরমে অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে কি কি নিয়ম মেনে চলা উচিত?
সূর্যের প্রচন্ড আলো এড়িয়ে চলা উচিত
স্বাভাবিকভাবে দুপুরবেলা রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। আর এই সময় যদি আপনি রোদের মধ্যে কাজ করেন, খেলাধুলা করেন কিংবা ঘুরাঘুরি করেন তাহলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হবে এমনকি শরীরেরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রোদের মধ্যে বাইরে বের না হওয়াটাই ভালো। বাইরে যাওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার করতে পারেন, ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়ম করে পানি পান করা
গরমের সময় স্বাভাবিকভাবে আমরা ঘেমে যাই। সেইসাথে পানির তৃষ্ণা বেশি পায়। গরমে সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই শরীরে পানির ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। আপনি প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়া চেষ্টা করবেন
আপনার বেডরুমে নিজের জন্য আলাদা ২ লিটার পানির বোতল রাখুন তারপর সেই বোতলের পানি প্রতিদিনের টা প্রতিদিন শেষ করুন। আর হ্যা অবশ্যই নিরাপদ পানি পান করতে হবে। কৃষ্ণের সময় ফলের জুস খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে বাইরের খোলা পরিবেশে নয় চেষ্টা করবেন নিজের বাসায় লেবুর শরবত অথবা ফলের জুস খাওয়ার।
সঠিক পোশাক-আশাক পড়তে হবে
গ্রীস্মের গরমের সময় মোটা কাপড়ের শার্ট, টি-শার্ট না পড়ে সুতি পাতলা কাপড় ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। তাছাড়া মোটা কাপড়ের জিন্স, টাইট জিন্স এগুলো না পড়ার চেষ্টা করবেন। বাজারে পাতলা কাপড়ের অনেক প্যান্ট পাওয়া যায় সেগুলো পড়বেন।
চেষ্টা করবেন বেশিরভাগ সময় লুঙ্গি পড়ে থাকার। পোশাকের কাপড় পাতলা নাকি ভারি সেটা দেখার সাথে সাথে কাপড়ের রং বেঁছে আপনাকে কাপড় পরিধান করতে হবে। গাঢ় রঙের কাপড় পরিহার করে হালকা রঙের কাপড় পরিধান করবেন।
কাপড়ের সাথে সাথে আমাদের সঠিক জুতা নির্বাচন করাটা জরুরি। বাতাস চলাচল করতে পারে এরকম অসংখ্য জুতা বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো কিনে পড়ার চেষ্টা করবেন।
ভারী, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এবং বাসী খাবার না খাওয়া
ফাস্টফুড জাতীয় খাবার মুখরোচক খাবার, এগুলো সামনে পড়লে খেতে মন চায়। যদি আপনার খুব বেশি খেতে ইচ্ছে করে এ জাতীয় খাবার মাসে দু’একবার থেকে পারেন। তবে আমি সাজেস্ট করবো এ ধরনের খাবার না খাওয়া।
তেল যুক্ত খাবার যেমন পোলাও, বিরিয়ানি, মাংস ইত্যাদি খাবার কম কম খাওয়া। বেশি বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল খেতে পারেন গরমের সময়। গরমের সময় একটি কমন সমস্যা হচ্ছে খাবার এক বেলারটা অন্য বেলা খাওয়া যায় না খাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে আপনাকে খাবার খাওয়ার পূর্বে সেটা বাসি কিংবা পুরনো কিনা দেখে নিতে হবে তারপর সেটা খাওয়া উচিত। তা না হলে আপনার পেটের অসুখ হতে পারে।
প্রতিদিন অবশ্যই সকালে গোসল করা
গরম হোক অথবা শীত হোক সকালবেলা গোসল করার সাথে কোনো জুড়ি নেই। আপনি যখন সকালে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে কোন কাজ করবেন তখন আপনার কাজ করার মনমানসিকতা আরো বৃদ্ধি পাবে। যদি আপনি সকালবেলা নদীতে সাঁতার কেটে গোসল করতে পারেন তাহলে তো আপনার শরীর পরিষ্কার এবং শারীরিক ব্যায়াম একসাথে দুটি কাজ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে রাস্তাঘাট এমনিতেই প্রচুর ধুলোবালি থাকে তাই আপনি দিনে কয়েকবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। আর যদি আপনি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তাহলে পাঁচবার অজু করার ফলে আপনার এই কাজটি হয়ে যাবে। যার ফলে আপনার মুখ থাকবে পরিষ্কার এবং ব্রন মুক্ত।
হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকা
প্রচন্ড গরমের কারণে দেখা যায় গ্রীষ্মকালে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। প্রচন্ড গরমের কারণে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এরকমটা ঘটে। যদি আপনার শরীরে ব্যথা, শরীর দুর্বল লাগা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, মাথা ব্যথা ও ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় তাহলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং আপনার প্রেশার পরীক্ষা করে দেখুন।
গরমে তাড়াতাড়ি স্বস্তি পেতে কি খাবেন
- গরমের সময় সারাদিন এসি বা ফ্যানের নিচে না কাটিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক বাতাস গায়ে লাগানোর চেষ্টা করুন। যার ফলে আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
- গৃষ্ম কালীন অন্যতম ফল হচ্ছে বাঙ্গি এবং তরমুজ। গ্রীস্মের গরমে স্বস্তি পেতে বাঙ্গি এবং তরমুজ খেতে পারেন। এগুলো আপনাকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাকবে।
- ডাবের পানি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি পানীয়। ডাবের পানি প্রচণ্ড গরমে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দিবে।
- প্রচণ্ড গরমে যখন আপনি ফ্রিজ থেকে নামিয়ে এক কাপ দই খাবেন তখন এই অস্বস্তিকর গরমেও আপনার স্বস্তি লাগবে। তাছাড়া আপনি ফালুদা তৈরি করে খেতে পারেন এটিও আপনার শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস করবে।
- চিনি দিয়ে শরবত খাওয়ার পরিবর্তে আখের গুড় দিয়ে শরবত পান করতে পারেন এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে ঠান্ডা করবে।
- প্রচন্ড গরমে সারাদিন কাজ করার ফলে শরীর দিয়ে ঘাম ঝরে কলের শরীরে ক্লান্তি অনুভূব হয়। কিন্তু আপনি যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ দ্বারা পরিপূর্ণ পুদিনা পাতা তরকারিতে দিয়ে খান তাহলে এটা আপনার ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে।
- শসা বা ক্ষীরা, টমেটো, কাঁচামরিচ, পুদিনা পাতা বা ধনেপাতা ইত্যাদি দিয়ে সালাদ তৈরি করে খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতের খাবারের সাথে নিয়মিত সালাত খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে প্রচণ্ড গরমে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। কারন শসা ও টমেটোতে ৯০ শতাংশের উপরে পানি রয়েছে।