চার্জিং ক্যাবল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে আইফোন ব্যবহারকারীদের কি করা উচিত?
আপনি যদি একজন আইফোন ব্যবহারকারী হন তাহলে নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন আপনার আইফোনের চার্জিং ক্যাবলটি খুব সহজেই চট করে ভেঙ্গে যাচ্ছে।
শুধু আইফোন না আইপ্যাড, আইপড ও মেক বুকের চার্জিং ক্যাবল এর গঠন ও খুব একটা টেকসই হয় না। তার কারণ খুঁজতে অনেকেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গুঁতোগুঁতি করেন। কিন্তু প্রকৃত এবং সম্ভাব্য কারণটা হয়তো খুঁজে পান না। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু যে শুধু এখন তাই নয়।
অ্যাপলের জন্মলগ্ন থেকে এই সমস্যাটির শুরু হয়েছিল। ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাপী অ্যাপল ব্যবহারকারীরা চার্জিং ক্যাবল ভেঙ্গে যাওয়ার কথা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করতে থাকেন।
আসলে দেখা যায়, কয়েকদিন ব্যবহারের পরে চার্জিং ক্যাবল অর্থাৎ আইফোনের চার্জিং ক্যাবলের তারের গোড়ার দিক থেকে চট করে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ব্যাপারটি আসলেই খুবই দুঃখজনক। কারণ এত টাকা দিয়ে আইফোন কিনে যদি শান্তি মত ব্যবহার করা না যায় তাহলে এটি আপনাকে বিভ্রান্ত করবে।
মূলত দুইটি কারনে অকারনে সম্ভাব্য এই সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। কারণ দুইটি আমি নিচে বিস্তারিত বলছি।
প্রথম কারণ টার মধ্যে হলো অ্যাপল সব সময় তাদের নকশায় জোর দিয়েছে। যদিও অ্যাপলের তৈরি সকল পণ্যের কার্যকারিতা সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে কিন্তু তারপরেও ডিজাইনের ক্ষেত্রে ডিজাইন বিভাগের কর্মীদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।
চার্জিং ক্যাবল ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রথমত ডিজাইন টিমের কাছে হঠাৎ মনে হলো যদি চার্জিং ক্যাবল এর যে দিকটা ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত করা হয় সেদিকটা তুলনামূলক মোটাও খাঁজকাটা অংশটুকু ব্যবহারকারীদের কাছে বেশ দৃষ্টিকটু হয়।
অনেক ব্যবহারকারী দেয়ার রিসার্চের মাধ্যমে তারা এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে। তারপর ব্যাপারটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে তারা সেটি বদলে কিছুটা পাতলা করে দিলেন এবং আগের খাঁজকাটা অংশটার থেকে কিছু অংশ বাড়িয়ে যোগ করা হয়।
খাঁজকাটা অংশটুকু বাদ দিয়ে পরবর্তীতে সরু অংশটুকুর যোগ করা হয়। এটি করা হয়েছে ব্যবহারকারীদের হাতের চাপ সামলানোর জন্য। আসলে ব্যবহারকারীরা যখন চার্জিং ক্যাবল টাকে ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত করে তখন এরমধ্যে অনেকটুকু চাপ সৃষ্টি হয়। এ চাপের কারণে যাতে ডিভাইস বা চার্জিং ক্যাবল এর উপরের অংশে কোন ক্ষতি না হয় এজন্যই এই পদ্ধতিটি পরে ব্যবহার করা হয়।
তৎপরবর্তী সময়ে অ্যাপলের প্রকৌশলীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে নতুন নকশার কেবল খুব দ্রুত নষ্ট হয় যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবুও সেভাবেই বাজারে ছাড়া হয়। আর এর ফলশ্রুতিতে ২০০৭ সালের দিকে চার্জিং ক্যাবল ভেঙে যাওয়ার খবর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছিল। আর এই সমস্যা এখন অব্দি রয়ে গিয়েছে।
চলুন তাহলে এবার দ্বিতীয় কারণটি বলা যাক।
আপনারা সবাই স্টিভ জবস এর নাম শুনেছেন। তিনি অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ওই সময় স্টিভ জবস একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি হল আ গ্রীনার আপল। অর্থাৎ অ্যাপলের পণ্যগুলি থেকে পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানগুলো সেখান থেকে বাদ দেওয়া শুরু হলো।
আর এর মধ্যে ছিল পলিভিনাইল ক্লোরাইড। যার উপাদান পাওয়ার কেবলে স্থায়িত্ব বজায় রাখার মত পিভিসি প্লাস্টিক গুলো খুব বড় ভূমিকা পালন করেছিল। যাই হোক এই সব উপাদান বাদ দেওয়ার পর চার্জিং ক্যাবল এর যুক্ত করা হয় পাতলা আবরণ।
রাবারের আবরণযুক্ত হওয়ার পর দেখা গেল ক্যাবলটি কে খুব সহজে বানানো যায়। কিন্তু আবার খুব সহজেই ভেঙে যায়। আর এর সরাসরি ভুক্তভোগী হন ব্যবহারকারীরা।
একটা পদ্ধতি ফলো করে আপনারা এর সমাধান পেতে পারেন
যাইহোক পরিশেষে অ্যাপল এর চার্জিং ক্যাবল এর সমস্যাটি এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি এর একটি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এর থেকেও অনেক উন্নত মানের চার্জিং ক্যাবল এর আশা আমরা করতেই পারি।
চার্জিং ক্যাবল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে যা করনীয়
- মোবাইল চার্জ দেওয়ার আগে আপনার চার্জিং ক্যাবলের দুই প্রান্তে কোন ফাটা আছে কিনা তা দেখুন।
- চার্জিং ক্যাবলের কোন স্থানে ভিতরের তার বাহির হয়ে আছে কিনা খেয়াল করুন।
- যদি বেশি ওয়াটের চার্জার হয় তাহলে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করুন।
এই ২-১ টি বিষয় খেয়াল রাখলেই এই ক্যাবল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
যেসব কাজ করলে মোবাইলের ব্যাটারি ও চার্জার নষ্ট হয়ে যায়
এক মোবাইলের চার্জার দিয়ে অন্য মোবাইল চার্জ করা যাবে না। কারণ একেক মোবাইলের ব্যাটারি ও চার্জারের ভোল্টেজ এবং এম্পিয়ার ভিন্ন হয়ে থাকে। মোবাইলের ইনপুট পাওয়ার কত ওয়াট এবং চার্জারের আউটপুট পাওয়ার কত ওয়াট সেটা দেখে চার্জ দিবেন।
৫ ওয়াট চার্জার দিয়ে যদি ৩০ ওয়াটের ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল চার্জ দেন তাহলে সেটা চার্জ হতে আপনার অনেক সময় লেগে যাবে। আবার ঠিক একইভাবে ৩০ ওয়াটের চার্জার দিয়ে যদি ৫ ওয়াটের ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল চার্জ দেন তাহলে সে মোবাইলের ব্যাটারি নষ্ট হবে।
ধরুন আপনি কোন অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনার দায়িত্বে আছেন। সেখানে খেতে বসেছে ছোট মানুষ থেকে বৃদ্ধ বয়স্ক পর্যন্ত। নিশ্চয়ই আপনি সবাইকে একই হারে খাবার পরিবেশন করবেন না। যে ছোট তাকে কম যারা প্রাপ্তবয়স্ক তাদেরকে একটু বেশি এবং যারা বৃদ্ধ তাদেরকে একটু কম খাবার দিবেন।
ঠিক একইভাবে প্রতিটি মোবাইলের ব্যাটারি এবং চার্জারের ক্ষমতা এক নয় কমবেশি আছে। মোবাইলের ব্যাটারি যে ক্ষমতার তাকে ঠিক সেই ক্ষমতার চার্জার দিয়ে চার্জ দিতে হবে।
বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিভিন্ন রকম চার্জার পাওয়া যায়। তবে বাজারের যেনতেন সস্তা চার্জার দিয়ে যদি আপনার মোবাইল চার্জ দেন তাহলে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির সাথে সাথে আপনার মোবাইল নষ্ট হয়ে যাবে।
মোবাইল চার্জে দেওয়ার সময় ব্যাক কভার খুলে চার্জ দিন এর ফলে গরম হলে কোন সমস্যা হবে না আর ব্যাক কভার থাকলে গরম হলে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমাদের একটি বদ অভ্যাস হলো চার্জে রেখে মোবাইল ব্যবহার করা। যেটা মোটেই ঠিক না। অনেকে সারারাত ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল চার্জে দিয়ে রাখে এর ফলে মোবাইলের ব্যাটারি ক্ষয় হয়ে যাওয়া এবং নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মোবাইলের ব্যাটারি কেন ফুলে যায়
মোবাইলের ব্যাটারি ফুলে যাওয়া বিভিন্ন কারণ রয়েছে নিচে সেগুলো এক এক করে তুলে দেয়া হলো।
- দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে। কারণ সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ বা বয়স আছে।
- নিয়ম মেনে চার্জ না দেওয়ার কারনে। যেমন একেক সময়ে একেক চার্জার দিয়ে চার্জ দেওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে চার্জে লাগিয়ে রাখা ইত্যাদি।
- প্রায় সময় আমাদের হাত থেকে পড়ে যায়, এটা প্রত্যেক মোবাইল ব্যবহারকারীর সাথেই কোনো না কোনো সময় ঘটে থাকে। এর ফলে ব্যাটারির ফিজিক্যাল কিছু ক্ষতি হয় ফলে শর্ট সার্কিট, ওভারহিটিং ইত্যাদি করতে পারে।
- মোবাইল ব্যবহার করতে করতে অনেক সময় আমাদের মোবাইল প্রচুর গরম হয়ে যায়। এর ফলেও ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে।
- একাধারে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করা সেই সাথে দীর্ঘ্য সময় ইন্টারনেট চালানোর ফলে মোবাইলের ব্যাটারির কর্ম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- রোদের মধ্যে বা তাপ যুক্ত স্থানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ ঘটলে কী করবেন
নিম্নমানের চার্জার, ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে মোবাইলের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং বিস্ফোরন হতে পারে। তাছাড়া রোদে মোবাইল রাখলে বা রোদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার করলে বা মোবাইল কাপ পরে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন কথা হলো বিস্ফোরণ ঘটলে কি করবেন?
বিস্ফোরণ হলে যদি মোবাইলে আগুন ধরে তাহলে প্রথমে আগুন নেভাতে হবে। চার্জার লাগানো অবস্থায় যদি বিস্ফোরণ ঘটায় তাহলে সকেট থেকে চার্জার প্লাগ খুলে ফেলুন। সাথে সাথে বাড়ির মেইন সুইচ অফ করে দিন। এর ফলে আপনার বাসা আগুন ধরার হাত থেকে রক্ষা পাবে।