ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন দর্শন। আল্লাহ তাআলা আমাদের যে বিধান ইসলাম দিয়েছেন এটা আমাদের জীবনের জন্য এতটাই কল্যানকর করে যে, এখানে জীবনের এমন কোন বিষয় নাই যেটা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বা পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
আমরা মুসলমানরা কোন কোন সময় আনন্দ করবো, ফুর্তি করবো, মজা করবো সে সম্পর্কে ইসলামে পরিষ্কারভাবে বলা আছে।
জন্মের পর সাত দিনের মাথায় আকিকা করি। সন্তানের নামে পশু জবাই করে তার গোশত আমার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খাই। তখন অঘোষিতভাবে আনন্দ উৎসব সৃষ্টি হয়।
আবার যখন বিয়ের বয়স হয় তখন বিয়ের মাধ্যমে আরকেটি আনন্দ উৎসব উপলক্ষ হয়। মানুষের জীবনে বেশ কয়েকটি উপলক্ষ আছে যখন আপনি আনন্দ করবেন, উৎসব করবেন।
নিশ্চয়ই সেটি ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক উৎসব জাতীয় উৎসব নয়। একজন মানুষ যে দিনে জন্মগ্রহণ করেন প্রতিবছর ওই দিনটাতে জন্ম দিবস পালন করা এটাকে কুরআন এবং সুন্নাহ কোথাও উৎসাহিত করা হয়নি। এমনকি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি।
জন্মদিন পালন করা মূলত অমুসলিমদের উৎসব। খ্রিস্টানরা সর্বপ্রথম জন্মদিন পালন করা শুরু করে আস্তে আস্তে সেটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
ইসলামে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
জন্মদিন নিয়ে সারা বিশ্বের ইসলামিক স্কলারদের মতামত যদি তুলে ধরি। তাহলে দুটি মত আমাদের সামনে আসে।
প্রথম মতামত
মিশরের সরকারি ফতোয়া বোর্ডের থেকে তারা বলেন, জন্মদিন পালন করা জায়েজ তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা পালন করতে হবে। তারা কিছু যুক্তি আর শর্ত দিয়েছেন সেগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
মানুষের জন্ম হলো আল্লাহতালার থেকে একটি বড় নেয়ামত। আর নেয়ামতের কথা যখন মানুষের মনে পরবে বা সামনে আসবে তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কারতে ইসলামে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এক নবী প্রসঙ্গে বলছেন যে, আমার জন্ম, আমার মৃত্যু এবং আমি যেদিন আবার পুনরায় উঠবো সেদিন আমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
এখানে জন্ম বিষয়টি কেন্দ্র করে শান্তি ও প্রার্থনার বিষয়টি চলে আসছে।
একবার রাসূল (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি সোমবারে কেন রোজা রাখেন। তখন নবী করিম (সঃ) জবাবে বলেন এটি এমন একটি দিন যখন আমার জন্ম হয়েছিল।
শর্ত-১: জন্মদিনকে ঈদ বা কোনো উৎসবের রূপ দেওয়া যাবে না।
শর্ত-২: এটি শুধুমাত্র আল্লাহর শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন হবে।
বর্তমানে আমরা জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে যা যা করে থাকি তার মধ্যে এইগুলা থাকে না।
দ্বিতীয় মতামত
সৌদি আরবের স্কলারগণ এবং আমাদের দেশের বেশিরভাগ স্কলারগন যে মতামতি দিয়ে থাকেন সেটি হলো
জন্মদিন পালন করা কোন মুসলমানের জন্য শোভনীয় নয় এবং ইসলাম এটাকে ভালো ভাবে দেখে না। বরং আমরা এটা পালন করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেদআত করে থাকি।
আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ কষ্টে দিনযাপন করে, না খেয়ে থাকে, তাদের সন্তানদের ঠিকমতো স্কুলে পাঠাতে পারে না, খাবার দিতে পারে না। অথচ আমরা এই সমাজের অনেকে ধুমধাম করে জন্ম পালনের নামে অর্থ ও খাবার অপচয় করে।
আর এটা আমাদের গরিব প্রতিবেশী ভাই বোনদের প্রতি একধরনের উপহাসের সামিল। আর ইসলাম কখনো এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা দেয় না।
জন্মদিবস ধুমধাম করে পালন করা ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না। আপনার জন্মদিনে যদি আপনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও নেয়ামতের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চান সেটা ভালো কথা।
ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করা এটি একটি অপচয় এবং অমুসলিমদের সংস্কৃতি ও কালচার। নবী-রাসূল এবং সাহাবীদের যুগ থেকে কেউ কোনদিন কারো জন্মদিন পালন করেন নি।
জন্মদিবস পালন করা আরো একটি কারনে অযৌক্তিক। একজন মানুষের জন্ম বার্ষিকী আসা মানে তার জীবন থেকে একটি বছর চলে যাওয়া, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আর আমাদের যে হায়াত দিয়েছেন সেখান থেকে একটি বছর কমে গেল। আর একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে এখানে আনন্দের কিছু নেই।
একজন মানুষের জীবনের কিছু লক্ষ্য থাকে। আমাদের দেশের মানুষ ৬০ থেকে ৬৫ বছর বাঁচে। আপনার ৩০ বছর বয়সে যখন আরো একটি জন্মবার্ষিকী চলে আসলো তার মানে আপনাকে আর ২৯ বছর বয়সে জীবনের লক্ষ্য গুলো পূরণ করতে হবে। জন্মবার্ষিকী বুদ্ধিমান একজন মানুষকে ভাবতে শেখায়। সে কিভাবে তার জীবনের টার্গেটকে পূরণ করবে এবং আত্মসমালোচনা করবে এখানে ফুর্তি করা, উৎসব করা সত্যিকার অর্থে এখানে কোনো লজিক নেই।