হজ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার অন্যতম একটি মাধ্যম। ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের যে ৫টি স্তম্ভ রয়েছে তার মধ্যে হজ হচ্ছে চতুর্থ স্তম্ভ। আর কোন মুসলমান নর-নারী আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম থাকলে তার জীবনে একবার হজ করা ফরজ বা আবশ্যকীয় বলা যায়।
অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর একবার হজ করা ফরজ। অনেক মুসলমান রয়েছে যারা আর্থিকভাবে সক্ষম কিন্তু শারীরিকভাবে অসক্ষম আবার এমন মানুষ আছে যারা শারীরিকভাবে সক্ষম কিন্তু আর্থিকভাবে অসুখ কম। তাই অনেক মুসলমান চাইলেও হজ করতে পারে না বিভিন্ন সমস্যার কারণে।
আবার অনেক মুসলমান আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম সত্ত্বেও তাদের ধারণা নেই কিভাবে হজ্বে যাবেন। আর সামনে যেহেতু ২০২৩ সালের হজের সময় চলে আসছে তাই অনেকের ইচ্ছে হজ করার। আগামী ২৭ জুন, ২০২২ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবে পবিত্র হজ্জ অনুষ্ঠিত হবে।
আর মূলত আজকে আমাদের পোষ্টটি হচ্ছে হজ, হজের প্যাকেজ ও হজে কিভাবে যাবেন সেই সংক্রান্ত। আশা করছি এই পোস্টের মাধ্যমে সকল বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারবো।
২০২৩ সালে সরকারিভাবে হজের প্যাকেজ
২০২৩ সালে সর্বমোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ্জ করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যেতে পারবেন, বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের দিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী। এর মধ্যে ১৫ হাজার মুসলমান যাবে সরকারি ব্যবস্থাপনায়।
২০২৩ সালে অর্থাৎ এবার হজযাত্রীদের হজে যাওয়ার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার শুধুমাত্র একটি প্যাকেজে থাকছে। ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ১ লাখ টাকা বেশি গুনতে হবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার জন্য।
২০২৩ সালে বেসরকারিভাবে হজের প্যাকেজ
প্রথমেই বলেছি, ২০২৩ সালে সর্বমোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ্জ করার সুযোগ পাবে। আর তার মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন।
২০২৩ সালে হজযাত্রীদের বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার প্যাকেজ ৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে হজ্জ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ( হাব)। বেসরকারি হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে।
২০২৩ সালে হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা
২০২৩ সালে অর্থাৎ এই বছর ৬৫ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সে হজ যাত্রীরা চাইলে হজ করতে যেতে পারবেন।
২০২৩ সালের হজ যাত্রী ইচ্ছকদের কিছু নিয়মাবলী
প্রত্যেক হজ যাত্রীর পাসপোর্ট এর মেয়াদ থাকতে হবে ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত। আর পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার সময় হজযাত্রীকে পূর্বে নিবন্ধন করার সময় ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর/জন্মনিবন্ধনের নম্বর হুবহু লিপিবদ্ধ করতে হবে
এছাড়া পাসপোর্ট করতে হবে সেই ব্যাক্তির পূর্ণাঙ্গ নামে, সৌদি ভিসা লজমেন্টে জটিলতা দূর করার জন্য। পাসপোর্ট এর মধ্যে যে তথ্য পাত্তা রয়েছে তা স্টাপলার পিন দিয়ে গাতা যাবে না বা অন্য কোনভাবে ছিদ্র করা যাবে না সেখানে।
প্রত্যেক হজ যাত্রীকে কোরবানির খরচ পৃথকভাবে নিজ দায়িত্বে সঙ্গে নিতে হবে। সর্বশেষ, হজ যাত্রীকে সৌদি আরবের হজ করার সময় আইডি কার্ড গলায় সব সময় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
২০২৩ সালে কিভাবে হজের জন্য টিকেট কিনবেন
সর্ব প্রথম আপনি নিজে কিংবা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বৈধ হজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর পেমেন্ট ভাউচার সহ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে এবং আপনি প্রাক নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করুন।
সৌদি সরকারের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী জাতীয় হজ/ ওমরাহর নীতির ভিত্তিতে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে হজযাত্রীদের।
প্রাক নিবন্ধন করতে যা প্রয়োজন
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- মোবাইল নম্বর (এক্টিব)
- সরকারি ব্যবস্থাপনায় হলে তার জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য ৩০ হাজার ৭৫২ টাকা জমা দিতে হবে।
প্রাক নিবন্ধন করা যাবে যেসব জায়গায়
নিবন্ধন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে, যেখান থেকেই আপনি আপনার প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবেন। অযথা এগুলো ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে ধোকা খাবেন না।
- ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র
- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে
- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে
- বৈধ হজ এজেন্সিতে (ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত)
প্রাক নিবন্ধন করার পর
প্রাক নিবন্ধন করার পর হজে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হলে সেই হজ যাত্রীর মোবাইলে একটি এসএমএস পাবে। এসএমএস অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হজ অফিস বা সংশ্লিষ্ট এজেন্সি প্রাক নিবন্ধন তথ্যভাণ্ডার থেকে অনলাইনে হজ যাত্রীদের আবেদন গ্রহণ করে প্যাকেজের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করলে সেই মর্মে হজ অফিস বা হজ এজেন্সি তা নিশ্চিত করবে।
এবং তা নিশ্চিত করলে পিলগ্রিম আইডি বা PID তৈরি হবে। হজ যাত্রী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার পর সেই হজ যাত্রীর মোবাইল নম্বরে এসএমএস এর মাধ্যমে PID নিশ্চিত করা হবে। আর অবশ্যই পিলগ্রিম আইডি হজে যাওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক।
পাক নিবন্ধন করার পর তা বাতিল করার নিয়ম
যদি কোন হজ যাত্রী প্রাক নিবন্ধন করার পর তা বাতিল করতে চায় অর্থাৎ পাক নিবন্ধন করে হজে গমন না করেন, তাহলে হজ যাত্রীর অগ্রিম জমাকৃত যেই টাকা রেখেছিল তা থেকে ২ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ৩হাজার টাকা প্রসেসিং ফ্রি সহ সর্বমোট ৫০০০ টাকা কেটে নেওয়া হবে। মোট ৫ হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা সে ব্যক্তি ফেরত পাবেন।
১৮ বয়সের নিচে হজ করতে চাইলে
যাদের বয়স ১৮ বছর এর নিচে কিংবা যাদের ১৮ বছর হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, সেক্ষেত্রে তারা অভিভাবকের সাথে জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে প্রাক নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে এ সকল বিষয়গুলো যাচাই করা হবে।