আমরা জানি, দিন দিন বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের মতো উন্নতির শিখরে এগিয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশের সেই উন্নতির আরেকটি পথযাত্রা হচ্ছে মেট্রোরেল। সম্প্রতি ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রো রেলের উদ্বোধন হয়।
তারপর থেকে এখনো বর্তমানে মেট্রো রেল চলমান অবস্থায় রয়েছে। মেট্রোরেল নামটি অনেকে শুনে থাকলেও অনেকের মেট্রোরেল সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা রয়েছে।
আর মেট্রোরেল সম্পর্কে জানা-অজানা সেই কিছু তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্ট। তবে মেট্রোরেল সম্পর্কে জানার পূর্বে প্রথমে জানতে হবে মেট্রোরেল কি।
মেট্রোরেল কি
অনেকের ধারণা ছিল হয়তো হয়তো মেট্রোরেল মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করে। অর্থাৎ হয়তো যে রেলগুলো মাটির নিচ দিয়ে একস্থান হতে অন্যস্থানে চলাচল করে সেগুলোই মেট্রোরেল।
কিন্তু না, বরং মেট্রোরেল বলা হয় তাকে যে রেল মেট্রো শহরে নির্দিষ্ট একটি স্থান হতে অন্য স্থানে বারবার চলাচল করে। আর মেট্রো বলতে বোঝায় মেট্রোপলিটন বা কোন পরিপূর্ণ নগর।
অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোন বড় শহর, সিটি বা টাউনের ভেতরে রেলব্যবস্থায় যে রেল এক স্থান হতে অন্য স্থানে নির্দিষ্ট সময় পর পর বারবার আবর্তিত হয় সেগুলোকেই মেট্রোরেল বলে। আর মেট্রোরেল হলে গনপরিবনের জন্য দ্রুত গতির একটি আধুনির রেল ব্যবস্থা।
মেট্রোরেলের সুবিধা ও অসুবিধা
প্রত্যেকটি সুযোগ সুবিধার মধ্যেই সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই বিদ্যমান থাকে। তেমনি মেট্রোরেলের সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে, তবে মেট্রোরেলে অসুবিধার থেকে সুবিধার পরিমান অনেক বেশি।
মেট্রোলের সুবিধা
- পরিবেশ বান্ধব
- সময় সাশ্রয়
- গন্ত্যব্যে দ্রুত পৌছানো
- ভাড়ার জন্য উন্নত ব্যবস্থা
- কম স্থান দখল
- কম শক্তি খরচ
পরিবেশ বান্ধব
মেট্রোরেল সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। রাস্তা বা অন্যান্য যানবাহনের মত এতে এমন ময়লা থাকে না। তাছাড়া মেট্রোরেলের স্থানগুলো সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।
সময় সাশ্রয়
কোন নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য অনেক পূর্বে বের হতে হয় না। বরং নির্দিষ্ট সময়ের কিছুক্ষণ পূর্বে বের হয়ে মেট্রোরেলের মাধ্যমে খুব সহজে কোন স্থানে যাওয়া যায়। এতে করে সময় অনেকটা সাশ্রয় হয়। কারণ প্রতিদিন যানবাহনের পেছনে আমাদের অনেকটা সময় খরচ হয়ে যায়। তাই মেট্রোরেল সময় সাশ্রয়ের জন্য খুবই কার্যকরী।
গন্ত্যব্যে দ্রুত পৌছানো
অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মেট্রোরেলের সাহায্যে অনেক দ্রুত গন্তব্যস্থানে পৌঁছানো যায়। আর মেট্রো রেলের ইঞ্জিন আধুনিক মানের যার ফলে এর মাধ্যমে খুব দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করা যায়।
ভাড়ার জন্য উন্নত ব্যবস্থা
বেশিরভাগ মেট্রোরেলে ভাড়ার জন্য উন্মুক্ত ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। যেমন বাংলাদেশে কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া পেমেন্ট করতে হয়। আর ভাড়া পেমেন্ট করা ছাড়া আপনি মেট্রো রেলে উঠতে পারবেন না। গাড়ি বা যানবাহনের মাধ্যমে অনেকে ভাড়া না দিয়ে চলে যায়। কিন্তু মেট্রোরেলে ভাড়া না দিয়ে ওঠার কোন সুযোগ নেই। মেট্রোরে হলে ওঠার জন্য আপনাকে মেশিনের মাধ্যমে প্রথমে টিকেট ক্রয় করতে হয়। আর সেই টিকেট দেখালে অটোমেটিক গেইট খুলে যায়।
কম স্থান দখল
আমরা প্রায় দেখেছি বাস কিংবা অন্যান্য যানবাহন রাস্তার বেশিরভাগ অংশ দখল করে থাকে। যার ফলে চলাচল সমস্যা সহ জ্যাম লেগেই থাকে। কিন্তু মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেল চলার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার ততটুকু জায়গা দখল করে। আর তাছাড়া বাংলাদেশের মেট্রোরেল তৈরি করা হয়েছে ফ্লাইওভারের মতো করে। যার ফলে এটি একদম কম জায়গা দখল করে আছে।
কম শক্তি খরচ
মেট্রোরেল মূলত চলে বিদ্যুত শক্তির মাধ্যমে, যার মাধ্যমে অন্যান্য জ্বালানি তুলনা কম শক্তি খরচ হয়। এতে করে আরও জ্বালানির সরবরাহ আরও বাড়ছে।
যানজট থেকে মুক্তি
প্রতিদিন যানজটের কারণে ঢাকা শহরে অনেক সময় নষ্ট হয়ে থাকে মানুষের। কিন্তু মেট্রোরেলের মাধ্যমে চলাচল করার ফলে কোন যানজট পোহাতে হবে না। এতে করে খুব সহজে ও দ্রুত গন্তব্যস্থানে চলে যাওয়া যাবে।
আরও কিছু সুবিধা হচ্ছে,
প্রতি ঘন্টায় মেট্রো রেলের মাধ্যমে প্রায় ৬,০০০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে।
প্রতিটি ট্রেন অত্যাধুনিক মানের।
যেহেতু মেট্রোরেল ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করবে তাই যানবাহনের চলাচলের কোন সমস্যা হবে না।
মেট্রোলের অসুবিধা
>> একটা সুবিধার পাশাপাশি মেট্রোলের কিছু অসুবিধা রয়েছে। কিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরা হলোঃ
>> মেট্রো রেল স্টেশন থেকে নামার পর গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য বাকি পথ হাঁটতে হবে কিংবা সেই আবার যানবাহনের সাহায্য নিতে হবেই। এতে করে খরচ আরো বাড়বে।
>> বেশিরভাগ সময় মেট্রোলের ভেতর দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়।
>> যেহেতু মেট্রোরেল বিদ্যুতের মাধ্যমে চলাচল করবে। তাই কোন কারনে বিদ্যুৎ চলে গেলে মেট্রোরেল পরবর্তী স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবে জেনারেটরের সাপোর্টের মাধ্যমে। বিদ্যুৎ আসলে আবার মেট্রোরেল চলাচল করবে।
>> রাতের বেলা মেট্রোরেল অনেকটা ফাঁকা হওয়ার কারণে মানুষ অপরাধ জনিত কর্মকাণ্ড জড়িয়ে পড়তে পারে।
>> কোন কারণবশত স্টেশন মিস করলে গাড়ির মতো যেখানে সেখানে নামতে পারবেন না। বরং এর পরবর্তী স্টেশনে আপনাকে জানতে হবে। এতে করে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
ঢাকা মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা
ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত ভ্রমণের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে। যেখানে এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে কত টাকা ভাড়া লাগবে মেট্রোলের মাধ্যমে তা দেখা যাবে।
স্থান | ভাড়া |
উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত | ৬০ টাকা |
উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশন পর্যন্ত | ২০ টাকা |
উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশন পর্যন্ত | ৩০ টাকা |
উত্তরা নর্থ থেকে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত | ৪০ টাকা |
উত্তরা নর্থ থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত | ৫০ টাকা |
পল্লবী স্টেশন থেকে মিরপুর-১১,মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত | ২০ টাকা |
পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত | ৩০ টাকা |
মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত | ৩০ টাকা |
মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কারওয়ান বাজার স্টেশন পর্যন্ত | ৪০ টাকা |
মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত | ৫০ টাকা |
মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত | ৬০ টাকা |
মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত | ৭০ টাকা |
ফার্মগেট থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত | ৩০ টাকা |
ফার্মগেট থেকে কমলাপুর পর্যন্ত | ৪০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,মতিঝিল ও সচিবালয় স্টেশন পর্যন্ত | ২০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার পর্যন্ত | ৩০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত | ৪০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে বিজয় সরণি ও আগারগাঁও পর্যন্ত | ৫০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত | ৬০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন পর্যন্ত | ৭০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে মিরপুর-১১ ও পল্লবী পর্যন্ত | ৮০ টাকা |
কমলাপুর স্টেশন থেকে উত্তরা সাউথ স্টেশন পর্যন্ত | ৯০ টাকা |
ঢাকা মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য কত
ঢাকা মেট্রো রেলের বর্তমানে প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২০.১ কিলোমিটার (ভায়াডাক্ট সহ ২১.২৬ কিলোমিটার)। তবে সর্বমোট পরিকল্পিত দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২৮.৭৪১ কিলোমিটার, যা ২০৩০ নাগাদ যা মোট ৬টি মেট্রো লাইন ১২৮.৭৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।
মেট্রোরেল কবে উদ্বোধন করা হয়
মেট্রোরেলের নির্মান কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১৬ সালের ২৬ জুন। আর চলাচলের জন্য মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর।
ঢাকা মেট্রোরেল স্টেশন কয়টি ও কোথায় অবস্থিত
বর্তমানে ঢাকা মেট্রোরেলে স্টেশন সংখ্যা ১৭ টি। আর এই ১৭ টি মেট্রোরেল যে সকল জায়গায় অবস্থিত তা হচ্ছেঃ কমলাপুর, মতিঝিল, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০, মিরপুর ১১, পল্লবী, উত্তরা দক্ষিণ, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা উত্তর।
ঢাকা মেট্রোরেলে টিকিট কাটবেন কিভাবে
ঢাকা মেট্রো রেলের টিকিট কাটার জন্য ২ টি কার্ড সিস্টেম রয়েছে। একটির মাধ্যমে আপনি তাদের কাছ থেকে কাজ তৈরি করে সেই কার্ড রিচার্জ করে সব সময় তা দিয়ে টিকেট কেটে যাতায়াত করতে পারবেন এবং সেই টিকেটের টাকা আপনার সেই কার্ড থেকে কেটে নেবে।
আরেকটি হচ্ছে আপনি মেশিনের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করলে সীমিত সময়ের জন্য টিকেট হিসেবে একটি কার্ড দেওয়া হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে আপনি মেট্রোরেলে প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রথমে আপনাকে স্টেশন থেকে গন্তব্যস্থান টিকেট কাটার মেশিনে সিলেট করতে হবে। গন্তব্য স্থান সিলেক্ট করার পর আপনাকে কত টাকা ভাড়া দিতে হবে তা দেখাবে। এরপর আপনি সেই পরিমাণ টাকা মেশিনের মধ্যে দিয়ে ওকে দিলে টাকা নিয়ে একটি টিকেট প্রদান করবে।