বর্তমানে অনলাইনে যোগাযোগের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বের হয়েছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি।
আর এই অ্যাপগুলোর কারণে আমরা খুব সহজেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এই আর্টিকেলে আমরা এরকম একটি যোগাযোগ করার অ্যাপ মাইক্রোসফট টিমস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
মাইক্রোসফট টিমস কি
মাইক্রোসফট দ্বারা নির্মিত একটি মালিকাধীন ব্যবসায়িক যোগাযোগ প্লাটফর্ম বা মাধ্যম হচ্ছে মাইক্রোসফ টিমস। এই প্লাটফর্মের সাথে মাইক্রোসফট এর ৩৬৫ টি পণ্য যোগ করা হয়েছে।
মূলত এটি ক্লাউডভিত্তিক দলের সাহায্যকারী সফটওয়্যার যা মাইক্রোসফট ৩৬৫ এবং অফিস ৩৬৫ অ্যাপ্লিকেশন স্যুটের অংশ। মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করে মেসেজিং, অডিও এবং ভিডিও কলিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, বিভিন্ন ফাইল আদান প্রদান ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন।
মাইক্রোসফট টিমস এর ইতিহাস
মাইক্রোসফট টিমস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরিকৃত অ্যাপ। ২০১৭ সালের, ১৪ মার্চ মাইক্রোসফট কোম্পানি এই অ্যাপটি বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত করে। প্রথমে মাইক্রোসফট সাধারণ মানুষের জন্য সামাজিক যোগাযোগের জন্য স্ল্যাক (Slack) যুক্ত করে পরবর্তীতে তারা স্কাইপ যুক্ত করে।
বর্তমানে এই দুটি অ্যাপ এর প্রতিযোগী হিসেবে মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব অ্যাপ টিমস ঘোষণা করে। দিন দিন মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত দৈনিক মাইক্রোসফ্ট টিমস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লক্ষ।
মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করবেন যেভাবে
প্রথমে আপনাকে ইমেইল এড্রেস দিয়ে মাইক্রোসফট টিমস এ লগইন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি ইমেইল দিতে হবে যেটা দিয়ে আপনার মাইক্রোসফট একাউন্ট করা আছে।
তারপর আপনার সামনে তিনটি অপশন আসবে আপনি কিসের জন্য এটা ইউজ করতে চাচ্ছেন। আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য, আপনার বন্ধু বা পরিবারের জন্য, আপনার ব্যবসায়ের জন্য। তারপর আপনি সহজেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
মাইক্রোসফট টিমস এর ফিচার সমূহ
মেসেজিং বা চ্যাটিং
মাইক্রোসফট টিমসের সাহায্যে আপনি মেসেজ করতে পারবেন। চ্যাট করার সময় ছবি, অডিও ভিডিও আদান-প্রদান করতে পারবেন। মেসেঞ্জার এর মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন এই অ্যাপে।
ভয়েস কলিং
টিনস অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা একে অপরের সাথে কল করে কথা বলতে পারবে। এর ভয়েস কলিং কোয়ালিটি উন্নত। এই অ্যাপ এর ভয়েস কলিং এর একটি চমৎকার ফিচার হলো আপনি টিম কলিং করতে পারবেন।
ভিডিও কলিং ও মিটিং
টিমস অ্যাপ ব্যবহার করে ভার্চুয়াল মিটিং পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়াও এতে রয়েছে চমৎকার কিছু ফিচার যেমন ভিডিও কলিং এর সময় ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন, ভিডিও কল রেকর্ডিং, ট্রানস্ক্রিপশন অর্থাৎ আপনি যা বলবেন তা লিখা আকারে উঠবে, হোয়াইট বোর্ডিং এবং ব্রেকআউট রুম।
স্ক্রিন শেয়ারিং
ভিডিও কল করে আপনি স্ক্রিন শেয়ার করতে পারবেন। ধরুন আপনার কম্পিউটার বা পিসিতে একটা ফাংশন আপনি বুঝতে পারছেন না তখন আপনি আপনার বন্ধুকে কল দিয়ে স্কিন শেয়ার করলে সে হয়তো আপনার সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবে।
ক্যালেন্ডার
এটা কোন সাধারণ ক্যালেন্ডার নয়। এখানে আপনি নির্দিষ্ট তারিখের নির্দিষ্ট কাজের তথ্য বা অমুক তারিখে কারো সাথে যোগাযোগ করবেন এমন সবকিছু লিখে রাখতে পারবেন। এছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে।
অ্যাক্টিভিটি
এখানে আপনার টিমস অ্যাপের রিসেন্ট অ্যাক্টিভিটি জানতে পারবেন। অর্থাৎ এখানে আপনি সব ধরনের নোটিফিকেশন পাবেন কে আপনাকে মেসেজ করেছে, কল দিয়েছে, মেনশন করেছে, মেসেজ আনরিড-রিপ্লাই-রিএকশন ইত্যাদি।
মাইক্রোসফট টিমস এর আরো অনেক ফিচার রয়েছে। দিন দিন এটা আরও আপডেট হচ্ছে। মাইক্রোসফট টিমস ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন তবে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এটা ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না। যারা কম্পিউটারে মোবাইলের মত মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশন এর বিকল্প খুঁজছেন তাদের জন্য মাইক্রোসফট টিমস বেস্ট।
মাইক্রোসফট টিমস কেনো ব্যবহার করা উচিত
মাইক্রোসফট টিমস একটি কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থা প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্যবহার করে রিয়েল টাইমে চ্যাট করা সহ ফাইল এবং অডিও, ভিডিও গুলো এক জায়গায় রাখতে পারবেন।
অন্যান্য মাইক্রোসফট টুলস এবং পরিষেবা গুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে একত্রিত হয়েছে মাইক্রোসফট টিমস প্লাটফর্মটি। এই যেমন অফিস ৩৬৫ টিমগুলোকে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এক্সেস এবং ব্যবহারের সহজ করে তোলে।
Microsoft teams এর ইন্টারফেসও সহজ করা হয়েছে তাই এটি ব্যবহার করার সহজ। কম্পিউটারের যোগাযোগের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।
মাইক্রোসফট টিমস বৃহত্তর ব্যবসা এবং স্টর্টাআপকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। Microsoft teams সম্পূর্ণরূপে microsoft ইকো সিস্টেমের এর বাকি অংশের সাথে সম্পৃক্ত। টিমস বিনামূল্যে ছবি, অডিও, ভিডিও, ফাইল ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়।
মাইক্রোসফট টিমসে Microsoft এর নিজস্ব অন ড্রাইভ ফর বিজনেস রয়েছে। এছাড়া টিমসের মাধ্যমে উন্নত উপায়ে ফাইল আদান প্রদান এবং সহযোগিতার জন্য শেয়ার পয়েন্ট সিস্টেম রয়েছে।
তাছাড়া ডেটা সুরক্ষিত রাখার জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন কেন মাইক্রোসফট টিমস ব্যবহার করা উচিত।
মাইক্রোসফট টিমস বা ভিডিও কলিং অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
আমরা অনলাইনে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। তবে সকল এক যোগাযোগের জন্য নিরাপদ নয়। সব যোগাযোগের অ্যাপ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড নয়।
অনেক অ্যাপের নিরাপত্তার জনিত সমস্যা রয়েছে। ব্যবহারকারীদের পার্সোনাল ইনফরমেশন লন্ডনের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই যোগাযোগের জন্য সঠিক অ্যাপ বাছাই করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
তো মাইক্রোসফট টিমসকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। এইতো গেল অ্যাপস এর ভেতরের কথাবার্তা, এবার আসা যাক ভিডিও কলিং অ্যাপস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা উচিত।
বর্তমান সময়ে অডিও চ্যাট থেকে ভিডিও চ্যাট বেশি জনপ্রিয়। অনেক সময় আপনি ভিডিও চ্যাট করছেন কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি সেই ভিডিও রেকর্ড করে ফেলছে।
আনন্দ বা আবেগের বশে একান্ত ব্যক্তিগত বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও কল গুলো অনেকেই রেকর্ড করে ভুলে, অসাদধানতাবশত, শত্রুতামী করে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ছড়িয়ে যায়, যার ফলে সম্মানহানি হওয়ার ঘটনা শোনা যায়।
যদিও অ্যাপগুলোতে ভিডিও কল রেকর্ড করার সুবিধা থাকে না কিন্তু স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে অন্য কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে রেকর্ড করা যায়। তাই নিজের একান্ত আপন মানুষ ছাড়া কারো সাথে ভিডিও চ্যাট করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা না হলে পরবর্তী সময়ে আপনার ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। মনে রাখবেন স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার যে মাধ্যমে ভিডিও কল করা হোক না কেন সেটি রেকর্ড করা সম্ভব।
মাইক্রোসফট টিমস ইন্সটল করবেন কিভাবে
Microsoft teams আপনি দুইভাবে আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করতে পারবেন। প্রথমত আপনি microsoft store থেকে খুব সহজেই মাইক্রোসফট টিমস ইনস্টল করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে মাইক্রোসফট টিমস অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন।
যেমন microsoft.com এই ওয়েবসাইটে কম্পিউটারের জন্য মাইক্রোসফট টিমস এবং মোবাইলের জন্য মাইক্রোসফট টিমস ডাউনলোড করতে পারবেন।