আপনারা যারা ডোমেইন এবং হোস্টিং নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে রয়েছেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। বাংলাদেশের সেরা ৫ টি ডোমেইন ও হোস্টিং কোম্পানি।
দ্বিধাদ্বন্দের মূল ব্যাপারটা আসে প্রতারিত হওয়া নিয়ে। অনেকেই বলতে শোনা যায়, তারা বাংলাদেশের থেকে হোস্টিং কিনে প্রতারিত হয়েছেন।
প্রতারিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। সে ক্ষেত্রে প্রতারিত না হওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমত যে কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনবেন সে কোম্পানি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
অধিকাংশ মানুষ যে ভুলটি করে সেটি হল, ফেসবুক বা কোনো মাধ্যম থেকে বিজ্ঞাপন দেখে তাদের কাছ থেকে যাচাই বাছাই না করেই হোস্টিং কিনে ফেলে। কয়েকটি ব্যাপার এখানে কাজ করে, তা হল দাম কমে দেয়া। আবার অনেকে না বুঝেই ঝোপের মুখে হোস্টিং কিনে ফেলি।
যদি আপনি প্রথমত ডোমেইন এবং হোস্টিং সম্পর্কে কিছুটা রিসার্চ করেন, এবং আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কী কী রিসোর্স দরকার তাহলে আপনার এখানে প্রতারিত হবার চান্স কম। আর আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে হোস্টিং সম্পর্কে ও ভালো মানের কিছু হোস্টিং কোম্পানী সম্পর্কে বলার চেষ্টা করবো।
হোস্টিং কি
আমরা ওয়েবসাইটে যে সকল তথ্য, ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য জিনিস দেখতে পায় সেগুলো জমা রাখার জন্য একটি জায়গার প্রয়োজন। আর সেই জায়গায় হিসেবে কাজ করে হোস্টিং। যেমন কম্পিউটারে আমরা যে কোন ফাইল রাখার জন্য হার্ডডিক্স ব্যবহার করি।
তেমনি ওয়েবসাইটের হার্ডডিস্ক হিসেবে কাজ করে হোস্টিং। হোস্টিং এর সকল প্রকার জিনিস জমা থাকে যা আমরা ওয়েবসাইটের মধ্যেই দেখতে পাই এবং ডাউনলোড করতে পারি।
আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে হোস্টিং কে সার্ভারও বলা হয়ে থাকে। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে ওয়েব সার্ভার ওবলা হয়ে থাকে।
হোস্টিং কিভাবে কাজ করে
হোস্টিং মূলত আপনার ওয়েব সাইটে ডোমেইন নামের সাথে কানেক্টেড থাকে। যখন কেউ ব্রাউজারে আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন নামটি লিখে সার্চ করে, তখন ডোমেইনের আইপি এড্রেস কানেকটেড থাকা হোস্টিং কোম্পানির কম্পিউটারে নিয়ে যায়।
যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের সকল প্রকার কনটেন্ট, ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ফাইল জমা থাকে। আর তাৎক্ষণিক ডিজিটরের ব্রাউজারে ফাইলগুলো পাঠানো হয়, যেগুলো তাদের সামনে প্রদর্শিত হয়। ডোমেইনের সাথে যদি কোন হোস্টিং সার্ভার কানেক্টেড না থাকে, তাহলে আপনি সেই ওয়েবসাইটে কোন কিছু দেখতে পারবেন না।
হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে কোন কোন দিক লক্ষ্য রাখা উচিত
হোস্টিং কিনার ক্ষেত্রে সেরা হোস্টিং কোম্পানির চেনার জন্য কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। এসকল বৈশিষ্ট্যগুলো আপনাকে সেরা হোস্টিং কোম্পানি বা সেরা সার্ভিসটি চিনতে সাহায্য করবে।
- কাস্টমার সাপোর্ট
- হোস্টিং প্যাকেজ
- আপটাইম
- ব্যাকআপ
- সাইট স্পিড
- এস এস এল সার্টিফিকেট
- এবং কাস্টমার রিভিউ
কাস্টমার সাপোর্ট
কাস্টমার সাপোর্ট আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করে কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান পেতে এটাই একমাত্র ব্যবস্থা। আপনার ব্যবহার করা হোস্টিং কোম্পানির যদি কাস্টমার সাপোর্ট ভালো না থাকে তাহলে আপনি সমস্যার মধ্যে ডুবে থাকবেন কিন্তু সমাধান পাবেন না।
কাস্টমার সাপোর্ট সাধারণত ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা হয়ে থাকে। যেকোনো ধরনের সমস্যায় টিকেট ওপেন করলে অথবা লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে হোক সমাধান করে নেয়া যায়।
হোস্টিং প্যাকেজ
ভালো মানের হোস্টিং প্যাকেজ বলতে একটি নির্দিষ্ট দামে ভালো রিসোর্স সহ হোস্টিং প্যাকেজ থাকা বুঝায়। ধরুন কোন একটি কোম্পানি আপনাকে ১০ জিবি স্পেস অফার করতেছে। কিন্তু সেখানে র্যাম ৫১২mb, এক কোর সিপিইউ, লাইভ ভিজিটর সংখ্যা কম থাকে সে ক্ষেত্রে এটি কখনোই ভালো হোস্টিং হতে পারে না।
শুধুমাত্র স্পেস দিয়ে আপনি কি করবেন। যদি আপনার ওয়েবসাইটের অন্যান্য রিসোর্স কম থাকে। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
আপটাইম
আপটাইম আপনার ওয়েবসাইটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টির ওপর আপনাকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। তা না হলে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর এসেছে দেখবে ওয়েবসাইট অফলাইনে গিয়ে রয়েছে।
আপটাইম বলতে বোঝাচ্ছে যে, আপনার হোস্টিং সার্ভার টি কতক্ষণ চালু থাকবে। মনে রাখবেন আপ টাইম এর উপর সাইট এর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা নির্ভর করে থাকে।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অফ বা বন্ধ করে রাখতে হয়।
তাই কখনোই কেউ ১০০% আপটাইম গ্যারান্টি দিতে পারো না। তাই খেয়াল করে দেখবেন বেশিরভাগ হোস্টিং কোম্পানি ৯৯% আপ টাইম অফার করে থাকে।
ব্যাকআপ
ওয়েব সাইট ব্যাকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভালো মানের হোস্টিং কোম্পানি গুলো আপনার ওয়েবসাইটের ডাটা ব্যাকআপ রাখার ব্যবস্থা করে।
যদি কোন কারণে আপনার ডাটা ক্রাশ করে তখন যেন ব্যাকআপ এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটটি লাইভ করা যায়। আমি মনে করি, আপনি নিজে নিয়ম করে আপনার ওয়েবসাইটের ডাটা ব্যাকআপ রাখুন।
সাইট স্পিড
সাইটের স্পিড অনেক গুরত্বপূর্ণ যেটা আপনাকে এসইওতে সাহায্য করবে। ভালো মানের সেরা হোস্টিং কোম্পানি গুলো ওয়েবসাইটের ভালো স্পিড অফার করে থাকে। আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড ভালো না থাকলে গুগল আপনাকে ভালো চোখে দেখবে না। তাছাড়া সেটা তো আপনার কাস্টমারদের ওপরও প্রভাব ফেলবে।
এস এস এল সার্টিফিকেট
আপনার সাইটটি হ্যাকারদের হাত থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এস এস এল সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ হোস্টিং কোম্পানির এস এস এল সার্টিফিকেট ফ্রিতে দিয়ে থাকে। এতে আপনার জন্য এক্সট্রা কোন টাকা খরচ করতে হবে না। তবে হোস্টিং কেনার সময় আপনি অবশ্যই দেখে নেবেন তারা কি আসলেই এস এস এল সার্টিফিকেট প্রদান করে কিনা।
কাস্টমার রিভিউ
কাস্টমার রিভিউ অবশ্যই আপনি দেখবেন কারণ যেসব কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে তাদের রিভিউ অবশ্যই ভালো হবে। এটা দেখে আপনি হোস্টিং কোম্পানির বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারবেন না।
হোস্টিং কেনার জন্য সেরা কয়েকটি কোম্পানি
বর্তমানে হোস্টিং সার্ভিস দেয় এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে। তবে সব কোম্পানি যে ভালো এমন কিন্তু নয়। আপনাকে যাচাই করে ভালো হোস্টিং সার্ভিস বেছে নিতে হবে। যেখান থেকে আপনি ভালো মানের সাপোর্ট পাবেন ও আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড ভালো। তাই সকলের সুবিধার্থে কয়েকটি ভালো মানের হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
এক্সন হোস্ট (Exonhost)
এক্সন হোস্ট হোস্টিং কোম্পানি কে সর্বপ্রথম রাখার কারণ হচ্ছে এদের কাস্টমার সার্ভিস এবং ভালো মানের হোস্টিং প্যাকেজ। একটি নির্ভরযোগ্য ডোমেইন এবং হোস্টিং কোম্পানি হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসতেছে। কাস্টমার সেটিসফেকশন এর দিক থেকে এক্সন হোস্ট হোস্টিং কোম্পানি অন্যান্য কোম্পানি থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে।
আমি নিজেও এই কোম্পানির হোস্টিং ব্যবহার করতেছি। আপনার হোস্টিং রিলেটেড যেকোনো ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যা তারা খুব দ্রুত সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ধরুন আপনি নিজের অজান্তেই আপনার সার্ভারে কোন টেকনিক্যাল সমস্যা সৃষ্টি করে ফেলেছেন।
আপনি টিকেট ওপেন করেন। দেখবেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আপনার সমস্যাটি সমাধান করে দিয়েছে তাদের দক্ষ টেকনিক্যাল টিম। আমি এক্ষেত্রে অনেক উপকৃত এবং সন্তুষ্ট যে তাদের সাপোর্ট টিম খুব দ্রুতই সমস্যা গুলোর সমাধান দিতে পারে।
আপনার যে কোন ধরনের ওয়েবসাইট তৈরীর ক্ষেত্রে তাদের হোস্টিং পারফেক্ট। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করার পর ও আমার কোন ধরনের অভিযোগ তাদের প্রতি নাই।
হোস্টিং কোম্পানির সার্ভিস আমি নিজে ব্যবহার করি দেখে নিজে একটি পার্সোনাল রিভিউ দিলাম।
এক্সন হোস্টে আপনার যেকোন ধরনের ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য সকল ধরনের সার্ভার রয়েছে। শুরু করার জন্য প্যাকেজ গুলো দেখে নিন।
তারা মাঝে মাঝেই বিভিন্ন অকেশনে ভারি ভারি অফার দিয়ে থাকে। তাছাড়া আপনি চাইলেই প্রথম বছর ২৫% ছাড়ে হোস্টিং প্যাকেজ কিনতে পারেন। শুধু মাত্র প্রথম বছরের জন্য ২৫% ছাড় দেয়া হয়। পরবর্তি বছর রিনিও করা যাবে রেগুলার প্যাকেজ মূল্যে।
হোস্ট এবার (Hostever)
আমাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের সেরা হোস্টিং কোম্পানি হলো কোড ফর হোস্ট। কোম্পানিটির বর্তমানে নতুন নামকরণ করা হয়েছে। কোম্পানিটি এখন হোস্টএবার নামে পরিচিত। তারা ২০১১ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্ন সার্ভিস দিয়ে আসতেছে। তাদের কাছ থেকে ভালো মানের সাপোর্ট পাবেন।
ওয়েব হোস্ট বিডি (Webhostbd)
ওয়েব হোস্ট বিডি হোস্টিং কোম্পানিটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি হোস্টিং কোম্পানি যা আমাদের তালিকা ৩ নাম্বার স্থান পেয়েছে।
ওয়েব হোস্ট বিডির হোস্টিং প্যাকেজগুলো দেখে নিতে পারবেন এবং আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী প্যাক টি ক্রয় করতে পারবেন।
ঢাকা ওয়েব হোস্ট (dhakawebhost)
ঢাকা ওয়েব হোস্ট হোস্টিং কোম্পানি মোটামুটি কম দামে হোস্টিং অফার করে থাকে। আর এটির নাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে বাংলাদেশের হোস্টিং কোম্পানি। এরা ভালো হোস্টিং সার্ভিস দিয়ে থাকে ও সবসময় লাইভ সাপোর্ট পাওয়া যায়।
হোস্টিং বাংলাদেশ (hostingbangladesh)
হোস্টিং বাংলাদেশ খুব বিস্বস্ততার সংঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে হোস্টিং সার্ভিস দিয়ে আসতেছে। তারা ভালো মানের সার্ভিস দিয়ে থাকে। যা নতুন নতুন শুরু করতে চাচ্ছেন তারা ব্যবহার করতে পারেন এই কোম্পানির হোস্টিং। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। পছন্দ অনুযায়ী ক্রয় করতে পারবেন।
হোস্টিং কেনার জন্য কিভাবে পেমেন্ট করতে হয়
বাংলাদেশের হোস্টিং সার্ভিস কোম্পানি হয়ে থাকলে খুব সহজে ব্যাংক কার্ড, বিকাশ, নগদ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমেঝোস্টিং সার্ভিস ক্রয় করলে পেমেন্ট করতে পারবেন। তবে যদি অন্যান্য দেশের হোস্টিং কোম্পানি হয়ে থাকে তাহলে ডেবিট কার্ড ও ক্রাডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলারে পেমেন্ট করতে হবে।