সুস্থ সুন্দর থাকার জন্য শাকসবজি সবচেয়ে উপকারী খাদ্য। এতে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। আমাদের দেশের মানুষ নিয়মিত শাকসবজি খেয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ তারা তাদের বাড়ির আঙিনায় টুকটাক শাকসবজি লাগিয়ে থাকে নিজেদের খাওয়ার জন্য। আমাদের দেশে সুস্বাদু, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর বাভিন্ন শাকসবজি রয়েছে। আজকে কচু শাক এর উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
শহরের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলে কচু গাছ দেখা যায় বেশি। কচু শাক বাংলাদেশ কিন্তু অনেক পরিচিত এর পুষ্টিগুণ এর কারণে। অনেকের কচুশাক পছন্দ না কারণ কচু শাক খেলে গলা চুলকায়। এ ধরনের সমস্যার কারণে অনেকে কচু শাক খেতে চায় না। কিন্তু আসলে গ্রামঞ্চলে কচুশাকের জনপ্রিয়তা বেশি।
কচু শাক কিভাবে কত প্রকারে খাওয়া যায়
কচু শাক মূলত ভর্তা এবং তরকারিতে বেশ মানায়। তাছাড়া ইলিশ মাছ, শুটকি কিংবা ছোট মাছ এবং চিংড়ি মাছ দিয়ে এই শাকের তরকারি বা ভর্তা খুব জনপ্রিয়।
এটি এমন একটি শাক যার কোন অংশ অপ্রয়োজনীয় আছে বলতে পারবেন না। কচু শাকের পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায় এবং মূল তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। অর্থাৎ এর প্রতিটা অংশ খাওয়া যায়। ভালো করে তৈরি করতে পারলে এটি খেতে বেশ সুস্বাদু।
কচু শাকে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে
অন্যান্য শাকের মত কচুশাকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ ও ভিটামিন পদার্থ রয়েছে। তাছাড়া প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, শর্করা, ফ্যাট জাতীয় উপাদান বিদ্যমান।
আর এই সকল পুষ্টগুল গুলো আমাদের দেহকে নানভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। আর যেখল খাবারেই এতো সকল পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে সেগুলো দেহকে সুস্থ রাখার জন্য খাওয়া উচিত।
প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকে কি কি থাকে
অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকে পাওয়া যায়ঃ
শর্করা | ৬.৮ গ্রাম |
প্রোটিন | ৩.৯ গ্রাম |
লৌহ | ১০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) | ০.২২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন) | ০.২৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১২ মিলিগ্রাম |
স্নেহ বা চর্বি | ১.৫ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২২৭ মিলিগ্রাম |
খাদ্যশক্তি | ৫৬ কিলোক্যালরি |
কচু শাকের খাওয়ার উপকারিতা
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে কচুশাকে। তাই চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে অথবা রাতকানা রোগ প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি।
আপনার শরীরের মধ্যে আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে কচুশাক আয়োডিনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করার জন্য কচুশাকের আশ দারুন ভূমিকা পালন করে।
প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় মজবুত এবং শক্ত করতে সহায়তা করে।
দেহের অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক এর ভূমিকা এবং কার্যকরী অনেক। রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে অনেক ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভিটামিন সি এর উপাদান আপনার মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও অনেক ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত কচু শাক খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষমতা অর্জন করবেন। কারণ কচুশাকে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
কচু শাকের উপকারিতা মধ্যে হৃদরোগ ও স্ট্রোক জাতীয় রোগের ঝুঁকি কমায়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম।
আমাদের অনেকের জ্বর একটি কমন রোগ। যদি আপনার জ্বর এসে থাকে তাহলে জ্বরের সময় দুধ কচু রান্না করে খেয়ে দেখুন। দ্রুত ভালো হওয়ার আশা করা যায়।
তাছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পূরণ করতে কচু শাক এর ভূমিকা অনেক।
কোন শাক এর প্রতি অবহেলা করবেন না। কচু শাক যেহেতু সহজ এবং সহজলভ্য এবং সহজে পাওয়া যায় তাই অনেকেই এই শাককে গুরুত্ব দিতে চাইনা। তাই আমি মনে করি এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা জানার পর আপনি নিশ্চয়ই একে গুরুত্ব দেবেন। এবং দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার জন্য এই শাকের গুরুত্ব দিতে কোন অংশে কম করবেন না।
কচু শাক খাওয়ার কিছু অপকারিতা
প্রতিটা জিনিশের মতো কচু শাকেও সামান্য পরিমানে অপকারিতা রয়েছে। অনেক সময় কচু শাক বা কচু খেলে গলা চুলকায়। কারণ কচুতে রয়েছে অক্সলেট নামক উপাদান, যার ফলে সমস্যাটি হয়।
তাই এ সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। আর কচু শাক রান্না করার পূর্বে অবশ্যই গরম পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে, এতে করে গলা চুলকায় না ও সকল জীবানু চলে যাবে।
অ্যালার্জির সমস্যা বা চুলকানি আছে যাদের তাদের কচু বা কচু শাক না খাওয়াই ভালো। কারন কচু শাক খাওয়ার ফলে এলার্জি হতে পারে কিংবা শরীর চুলকাতে পারে।
কচুশাকের খেলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে। তবে কম খেলে বেশি সমস্যা হবে না। আর যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের সাবধানতা অবল্মবন করা উচিত।
কচু শাক চেনার উপায়
কচু শাক সহজে চেনার জন্য নিচে কয়েকটি ছবি দেওয়া হলো, যেনো খুব সহজে চিনতে পারে।
আপনার হাতের কাছে কচু শাক কোথায় পাবেন?
প্রথমত আপনার হাতের কাছে দেখবেন অনেক সময় বাড়ির আঙ্গিনায় কচু গাছ হয়, আপনি সেখান থেকে কচু শাক সংগ্রহ করতে পারবেন। তাছাড়া আপনার আশে-পাশের শাক-সব্জির বাজারগুলোতে অনায়াশেই কচু শাক পেয়ে যাবেন। বর্তমানে কচু শাক চাষ করা হয় অনেক জায়গয়ায়, তাই আপনার হাতের কাছে বা আশে পাশে কচু শাক চাষ করে হলে সেখান থেকেও পেয়ে যাবেন কচু শাক।
কচু শাক রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা
অবশ্যই কচু শাক রন্নার ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা অবলম্বন করতে হবে। কারন অনেক সময় পোকা-মাকড় সহ বিষাক্ত প্রানী বা বিষাক্ত প্রানীর লালা থাকতে পারে। যার ফলে অবশ্যই ভালো করে ধরতে হবে। প্রয়োজনে সিদ্ধ করে নিতে হবে। নাহলে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই যেকোন জিনিশ খাওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কচু শাক কি নিয়মিত খাওয়া উচিত
অনেকেই রয়েছেন যারা নিয়মিত কচু শাক বিভিন্নভাবে খেতে পছন্দ করে। আর কচু শাকে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকারী এবং চেহারায় বয়সের ছাপ দূর করতে সহকারী।
নিয়মিত কচু শাক খেলে হৃদরোগের ঝুকির সম্ভাবনা কমে। তাছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এ – যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং চোখের সমস্যা দূর করে। নিয়মিত কচু শাক খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও রক্তশূন্যতা দূর হয়।
কচু শাকের বিভিন্ন সুস্বাদু রেসিপি রান্না করবেন যেভাবে
কচু শাক বিভিন্ন ভাবে রান্না করা খাওয়া যায়। প্রয়োজনে আপনি না পারলে কচু শাকের বিভিন্ন রেসেপি বানানো শিখে নিতে পারে। কচু শাক বিভিন্নভাবে রান্না করার জন্য নিচের কয়েকটি কচু শাকের রেসিপির ভিডিও দেওয়া হলো।