ঘুমাতে যাওয়ার আগে এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে যা আপনি বা আমি নিয়মিত পালন করলে ঘুমানোর পরিপূর্ণ স্বাদ নিতে সক্ষম হব। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এমন কি অভ্যাস রয়েছে, যা আপনাকে সেরা ঘুম পেতে সহায়তা করবে। এই আর্টিকেলে আপনারা তা জানতে পারবেন।
রাত্র মানজীবনের সেরা একটি উপহার। দিন কাটবে কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে এবং রাত্র কাটবে ঘুম বা বিশ্রামের মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রত্যেককে দৈনিক রাতে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এই পরামর্শ ডাক্তারদের পক্ষ থেকে। কিন্তু অনেকেই কম সময় ঘুমায় আবার কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ঘুমায়। সেটা নির্ভর করে আপনার নিজের উপর। কিন্তু অবশ্যই ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু অভ্যাস
ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় যাওয়ার আগে আপনি প্রথম যে নিয়মটি অনুসরন করবেন তা হলো আপনার হাত এবং পা ধুয়ে নিবেন। যদি অতিরিক্ত ক্লান্ত বা ঘেমে থাকেন তাহলে গোসল করতে পারেন। তবে গোসল করার ক্ষেত্রে ঠান্ডা বা জ্বরের ব্যপারে খেয়াল রাখবেন। কারন অনেকের ক্ষেত্রে রাতে গোসল করলে ঠান্ডা বা জ্বর দেখা দিতে পারে।
রাতের খাবারের পর পানি খাওয়ার ব্যপারে একটু খেয়াল রাখবেন। খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে এবং ২০ মিনিট পরে কখনই পানি খাবেন না। এই অভ্যাসটি ১০ দিন নিয়মিত পালন করলেই নিজের পরিবর্তন দেখতে পাবেন। ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত পানি পান না করাই ভালো কারণ বেশি পানি পান করলে দেখা যাবে দু-তিন ঘন্টা ঘুমানোর পর প্রস্রাবের চাপে আপনার ঘুম ভেঙে গেছে।
এখন যে অভ্যাসটির কথা বলবো সেটি সবাই বলে। কারন এই অভ্যাসটি আপনাকে অয়ত্ব করতে হবে নিজের ভালোর জন্যই। ঘুমানোর আগে বিছানা থেকে আপনার ফোন দূরে রাখুন। সেই সাথে মোবাইলের ডাটা বা ওয়াইফাই অফ করে রাখবেন। এই নিয়মটি এত বলার একমাত্র কারন এই যে অনেক গবেষনায় মোবাইল কাছে রাখার বিরুপ প্রভাব দেখা গেছে। আর তাছাড়া বর্তমান যুগের যুবকরা রাতে না ঘুমিয়ে রাত ২-৩ পর্যন্ত মোবাইল চালায়।
ঘুমানোর আগে কোন ভাবেই বাজে চিন্তা করা যাবে না এবং যৌন বিষয়বস্তু দেখা যাবে না কখনোই। তাহলে শয়তান আপনার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নদোষ করিয়ে দিবে। তাছাড়া এই ধরনের বাজে অভ্যাস আপনার শীরর এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
বালিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিৎ। বেশি উচু বা বেশি নিচু বালিস ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এর ফলে আপনার ঘাড় ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যাবে। আপনি একটি কোল বালিশ ব্যবহার করতে পারেন কারন এটা আপনাকে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে। তবে আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে আর কোল বালিশের দরকার নেই। স্বামী স্ত্রী একে আপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবেন, এতে ঘুম যেমন ভালো হবে সেই সাথে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে একে অপরের প্রতি।
ঘুমানোর সময় পুরো অন্ধকার ঘরে ঘুমানো উচিৎ না। সবসময় সম্ভব হলে আবছা (Dim Light) আলোর বাতি জ্বালিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন আলো বেশি না হয় তাহলে আপনি গভীরভাবে ঘুমাতে পারবেন না। আর রাতের ঘুম হালকা হলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
ঘুমের সময় আপনার শরীরের অবস্থান অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। সবসময় চেষ্টা করবেন সোজা পিঠে ঘুমাতে। তাছাড়া সব সময় এক কাত হয়ে শুয়ে থাকলে অনেক সময় শরীর ব্যথা করে। তাছাড়া ঘুমানোর স্থান যেন আবার বেশি শক্ত না হয়। অর্থাৎ শক্ত বিছানায় ঘুমানো যাবে না।
তাছাড়া রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি আপনার ধর্মীয় অনুশাসন গুলো মানতে পারেন। ঘুমের দোয়া পড়া, ডান কাত হয়ে ঘুমানো ইত্যাদি। যেমন- সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়ে ঘুমানোর পূর্বে। সেই সাথে একবার সুরা ফাতেহা এবং তিনবার সূরা ইখলাস পড়া।
আর সর্বশেষ যে কথাটি বলব এটি অবশ্যই অভ্যাসে পরিনত করার চেষ্টা করবেন। ঘুমানোর আগে আপনার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা করুন। আজকের দিনটি সম্পর্কে ভাবুন যে কিভাবে কেটে গেলো এবং আগামীকালের কথা ভাবুন যে কি কি করতে হবে। এবং প্রতিজ্ঞা করুন যেনো আগামীকালে আজকের থেকে ভালো কিছু অর্জন করতে পারেন।
আশা করি ঘুমানোর পূর্বে উক্ত নিয়মগুলো ফলো করার ও মানার চেষ্টা করবেন। রাতের ঘুম আপনি সারাদিন দিনের বেলা ঘুমালেও কাজ হবে না। রাত আল্লাহ তায়ালার একটি অশেষ নেয়ামত।
কেনো ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত
রাতের ঘুম আমাদের শরীরের জন্য ওষুধের মত কাজ করে। রাতে ঘুম যত ভালো হবে আপনার স্বাস্থ্য তত ভালো থাকবে। ঘুম ভালো হলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করবে, শরীরের পেশি পুনরুদ্ধার হবে এবং আপনার মেজাজ ভালো থাকবে।
কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস যখন ব্যবহার করে থাকি আমরা তখন এর চার্জ শেষ হতে থাকে। আবার চার্জ শেষ হয়ে গেলে চার্জে দিয়ে থাকি। তেমনি ঘুমও অনেকটা আমাদের জন্য চার্জের মতো। সারাদিন যখন আপনি পরিশ্রম করবেন তখন আপনার শরীরের ক্লান্তি অনুভব হবে, রাতের ঘুম সেই ক্লান্তিভাব দূর করতে সাহায্য করে। পরদিন সকালে আপনি নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারবেন।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরের দিনের রুটিন ঠিক করে ফেলুন
যেকোনো কাজ আগে থেকে পরিকল্পনা বা প্রিপারেশন নিয়ে করলে সেক্ষেত্রে আপনি ভালো করতে পারবেন। আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ঘুমানোর আগে পরদিন কি কি কাজ করবেন সেগুলো রুটিন করে নিন তাহলে আপনার জন্য সহজ হবে।
ধরুন আপনি সকালে একটা মিটিং জয়েন করবেন। তখন আপনি আগে থেকে সেই মিটিংয়ে যাবতীয় জিনিসপত্র তৈরি করে রাখলে আপনার জন্য সহজ হবে। সেই মিটিংয়ে কোন পোশাক পরিধান করে যাবেন, সেটা ইস্ত্রি করা আছে কিনা! তারপর মিটিং শেষে আপনি কি করবেন? কোথায় যাবেন? এসব বিষয় আগে থেকে ঠিক করে রাখলে ভালো হবে আপনার জন্য।
ঘুমানোর দোয়া এবং আমল
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম যেখানে মানব জীবনের সকল কিছু কিভাবে পালন করবেন সেগুলো সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিভাবে ঘুমাতে হবে এবং ঘুমানোর সময় কি করা উচিত সে সম্পর্কে নবী করিম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- সর্বপ্রথম ঘুমানোর বিছানাটি ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর ফলে যেমন বিছানার উপর থাকা ধুলাবালি পরিষ্কার হবে, সেই সাথে বিছানায় শয়তান থাকলে তা দূর হবে। ঘুমানোর সময় ডান কাত হয়ে ঘুমানো সুন্নত। ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ঘুমের দোয়া পড়ে ঘুমাতে হবে। তাহলে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখবেন না।
ঘুমানোর দোয়ার ছবি দেওয়া আছে………
রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমালে আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই বান্দার জন্য একজন ফেরেশতা পাহারাদারের হিসাবে নিযুক্ত থাকে। যার ফলে শয়তান তার কাছে আসতে পারে না। সেই সাথে সূরা ইখলাস, সূরা নাস, সূরা ফালাক পড়বেন ঘুমানোর পূর্বে। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে এই সূরা গুলো পড়ে ঘুমাতেন।