আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশের খাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের শাক পাওয়া যায়, আর তার মধ্যে কলমি শাক বেশ জনপ্রিয় এবং খেতে সুস্বাদু। প্রত্যেকটি শাকের পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও তাজা রাখতে বেশ সহায়তা করে।
তবে অন্যান্য শাখার তুলনায় টাটকা তাজা সবুজ শাক থেকে বেশি পুষ্টি গুনাগুন পাওয়া যায়। আর সেই দিক দিয়েও কলমি শাক অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। পোষ্টের মাধ্যমে কলমি শাকের উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
পুষ্টি গুনাগুন কি
প্রাণীর দেহ গঠনে ও দেহকে সুস্থ থাকার জন্য মূল ভূমিকা পালন করে পুষ্টি, যা প্রাণীর একটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু গুলো খাওয়ার পর পরিপাক হয় এবং জটিল খাদ্য উপাদানগুলো ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয়, এসব সরল উপাদান দেহ শোষণ করে নেয় এবং এই প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলে।
পুষ্টি উপাদান প্রাণীর দেহের সকল অঙ্গের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষের পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য নতুন কোষ গঠন করে। প্রাণীর দেহে খাদ্যের সকল কাজেই পুষ্টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
কলমি শাক কিভাবে খাবেন
আমাদের দেশে তরকারির পাশাপাশি কলমি শাক ভর্তা অথবা ভাজি বানিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া তরকারিতে কলমি শাক খুব ভালো মানায়। এবং তরকারির সাথে আলাদা করে ঝোল রান্না করেও সহজে ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। আবার পাকোড়া এবং বড়া তৈরি করেও খাওয়া যায় কলমি শাক।
কলমি শাক কে একাধিক উপায় খাওয়া যায়। চাইলে তরকারির সাথে রান্না করে, কলমি শাক ভাজি করে, কলমি শাকের ভর্তা, বিভিন্ন তেলে ভাজা খাবার ইত্যাদি হিসেবে আরও বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। তবে আমাদের দেশের সবথেকে বেশি উপরে উল্লেখিত কয়েকটি জনপ্রিয় এবং এভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে।
কলমি শাকের পুষ্টিগুন কি
আমাদের দেশে কলমি শাক সস্তা ও সহজলভ্য হলেও, এই কলমি শাকের রয়েছে বহু পুষ্টিগুণ। কারণ কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, লোহা ও আরও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। আপনার হয়তো জানা, কলমি শাকে রয়েছে ভিটামিন বি-১ রয়েছে হেলেঞ্চা, কচু, থানকুনি ও পুঁইশাক এর চেয়ে বেশি। অর্থাৎ কলমি শাকে অনেক বেশি পরিমাণে থামেনি রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে যা যা পাবেন
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে পাওয়া যায়ঃ
কিলোক্যালোরি | ২৯ কিলোক্যালোরি |
সোডিয়াম | ১১৩ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩১২ মিলিগ্রাম |
খাদ্যআঁশ | ২.১ গ্রাম |
প্রোটিন | ৩ গ্রাম |
কর্বোহাইড্রেটস | ৫.৪ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৭৩ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৫০ মিলিগ্রাম |
লৌহ | ২.৫ মিলিগ্রাম |
জলীয় অংশ | ৮৯.৭ গ্রাম |
কলমি শাকের উপকারিতা
কলমি শাকের ঔষধি গুণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং চোখ ভালো রাখে।
দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথাসহ অনিদ্রা রোগে ভোগেন, কলমি শাক খাওয়ার মাধ্যমে মাথা ব্যথা ও অনিদ্রা দূর করা সম্ভব।
প্রতিটি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। আর কলমি শাক হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে। ছোট শিশুদের কলমি শাক এর মাধ্যমে ক্যালসিয়াম খাওয়ালে তাদের হাড় ছোট থেকেই মজবুত হয়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কলমি শাকের গুরুত্ব অপরিসীম। যেহেতু কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, তাই এটি শরীরের এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
অসুস্থ রোগীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকে। তাদের শারীরিক দুর্বলতা সবচেয়ে বড় প্রভাব হচ্ছে খাদ্যশক্তি। কলমি শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি। যা অসুস্থ রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেক সহায়তা করে।
তাছাড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে কলমি শাক অনন্য। রাতকানা রোগীদের ক্ষেত্রে কলমি শাক প্রচুর ভূমিকা পালন করে দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে, কারন এতে থাকে ভিটামিন এ।
রক্ত শূন্যতায় ভুক্তভোগিদের জন্য কলমি শাক দারুণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে লৌহ থাকায় সারা দেহে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করতে কলমি শাকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আগেই বলেছি কলমি শাক যেহেতু আঁশ জাতীয় খাবার তাই আঁশে ভরপুর। এই শাকের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করার ক্ষমতা থাকে এবং শরীরের স্বাভাবিক হজম খাদ্য পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় অনেকাংশে সাহায্য করে।
শরীরের কোন অংশে কেটে গেলে সেখানে কলমি শাকের পাতা আদা সহ বেটে কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিলে দ্রুত সেড়ে যায়। তাছাড়া ফোড়া হলেও এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে ফোড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়।
হাত পা জ্বালাপোড়া করলে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হলে কলমি শাকের রস তিন চার চামচ পরিমাণ সপ্তাহখানেক খেলে জ্বালাপোড়া কমে যায়। তাছাড়া অন্যভাবেও খাওয়া যায়। কলমি শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে সপ্তাহখানেক খেলে জ্বালাপোড়া কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমাশা রোগের ক্ষেত্রেও কলমি শাকের ভূমিকা অপরিসীম। কারন আমাশা রোগ হলে কলমি পাতার রসের সঙ্গে সামান্য আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেলে আমাশা রোগ ভালো হয়ে যায়।
জন্মের পর যদি মায়ের বুকের দুধ শিশু না পায় তাহলে কলমি শাক মা খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ উৎপন্ন হয়।
খুশকির যন্ত্রনায় ভুক্তভোগিদের ক্ষেত্রেও কলমি শাকের সমাধান রয়েছে। মাথার খুশকি দূর করতে নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন, এতে কার্যকরী ভূমিকা দেখতে পাবেন।
আসলে প্রত্যেকটি শাকের অনেক পুষ্টি গুণ থাকে। বেশিরভাগ শাকে ভিটামিন এ এবং লৌহ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান থাকে। তাই অন্তন্ত দিনের এক বেলার খাবারের সাথে যেকোন ধরনের শাক-সবজি জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। নিয়মিত শাকসবজি খেলে আপনার শরীরের গঠনগত দিক অনেক উন্নত হবে। চেহারা এবং শরীরের চামড়ায় এত সহজে প্রভাব পড়বে না।
কলমি শাক চেনার উপায়
শাক অনেক রকমের হয়ে থাকে তাই আলাদা কোনো কারণ নেই কলমি শাক চানার। তবে নিচে কিছু ছবি দেওয়া হলো যার মাধ্যমে খুবন সহজে কলমি শাক দেখতে কেমন ও চিনতে পারবেন।
আপনার হাতের কাছে কলমি শাক কোথায় পাবেন?
আমাদের হাতের কাছে কলমি শাক বলতে আমাদের বাড়ির আশে-পাশেই কলমি শাক পাওয়া যায়। বেশিরভাগ গ্রামের খাল-বিলের কিনারে কলমি শাক দেখতে পাবেন। তাছাড়া দেখবেন আপনার আশেপাশেও অনেক সময় কলমি শাক চাষ করা হয়।
বাজারে শাক-সবজির দোকানেও কলমি শাক পাওয়া যায়। শহরের ভ্যানগুলোতেও কলমি শাক বিক্রি করতে দেখা যায়। তাই যদি আপনি কলমি শাক খেতে চান তাহলে দেখবেন আপনার আশেপাশেই কলমি শাক বিক্রি করছে।
কলমি শাক রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা
শুধু কলমি শাক না যেকোন শাক রান্না করে খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারন যেহেতু কলমি শাক খালে-বিলে হয় এবং ক্ষেতের মধ্যে এগুলো চাষ করে হয় তাই বিভিন্ন পোকামাকড় থাকতে পারে। যা ফলে শাকগুলো অবশ্যই ভালো করে ধুতে হবে।
তাছাড়া বিশাক্ত প্রানী যেমন শাপ বা অন্যান্য প্রানীর লালা থাকতে পারে, তাই কলমি শাক রান্নার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। যেনো কোন প্রকার কীটনাশক সার বা বিষাক্ত প্রনীর লালা না থাকে।
হতেই হবে এমন কোন কথা নেই, তবে আমাদের সকলের উচিত সতর্কতা অবলম্বন করা। কখন কি হয় বলা যায় না।
কলমি শাক কি নিয়মিত খাওয়া উচিত
হ্যা অবশ্যই খেতে পারেন। নিয়মিত বা প্রতিদিন কলমি শাক খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কারন কলমি শাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে, যা দেহের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে অ্যানিমিয়া রোগীদের কলমি শাক খাওয়া উচিত নিয়মিত, কারন এতে উপাধান হিসেবে আয়রন রয়েছে।
যদি নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন তাহলে খাওয়ার রুচি বাড়ে অর্থাৎ খিদেমন্দা দূর হয়। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা দূর হয় ও হজম শক্তি বাড়ে।
নিয়মিত কলমি শাক খেলে ক্যান্সারের ঝুকি কমে থাকে, হার্টের সমস্যা দূর হয়, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে, দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে এবং সুগার রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।