সামনে আসছে ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। বর্তমানে আমাদের প্রায় প্রত্যেকের ঘরে ফ্রিজ থাকলেও এখনো এমন মানুষ আছে যাদের ঘরে ফ্রিজ নেই কিন্তু তারা ফ্রিজ কিনতে চাচ্ছে। ভালো ফ্রিজ চেনা সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকলে ফ্রিজ কিনে ঠকতে হয়। তবে আপনি যদি ভালো ফ্রিজ কেনার উপায় জানেন তাহলে আপনাকে ঠকতে হবে না।
ভালো মানের ফ্রিজ হলে আমরা সুবিধামতো বাজার করতে পারি এবং সেগুলো ফ্রিজে রাখতে পারি। কিন্তু যদি আপনার কেনা ফ্রিজটি খারাপ হয় তাহলে তাজা খাবার রাখলেও তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক ফ্রিজে খাবার তাজা থাকলেও তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে অবশ্যই আমাদের ফ্রিজ কেনার সময় ভালো ফ্রিজ বুঝে কিনতে হবে।
আজকে আলোচনা করব ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় ও খেলার সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক,
ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়
ফ্রিজের তাপমাত্রা সম্পর্কে
ফ্রিজ ক্রয় করার পূর্বে বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন সেই ফ্রিজের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত? যদি উক্ত ফ্রিজের তাপমাত্রা 1C-4C এর মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ফ্রিজে এমন খাবার রাখতে হবে যার জন্য 1C-4C তাপমাত্রা যথেষ্ট।
তবে অনেক ফ্রিজের তাপমাত্রা 5C হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি যে কোন খাবার সেখানে সংরক্ষণ করতে পারবেন। তাই সর্বপ্রথমে ফ্রিজের তাপমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ভালো মানের ফ্রিজ চেনার।
ক্যাপাসিটি সম্পর্ক
আপনার পরিবারের লোক সংখ্যা অনুযায়ী আপনাকে বুঝে ফ্রিজ কিনতে হবে। আপনার যদি ছোট পরিবার হয় তাহলে খুব বেশি ক্যাপাসিটি প্রয়োজন হয় না। আর বড় পরিবারের জন্য ছোট ফ্রিজের কাজ হয়না। তাই আপনার পরিবারের লোক সংখ্যা অনুযায়ী ফ্রিজ কিনুন। অযথা টাকা নষ্ট করবেন না।

ফ্রিজ পরিষ্কার করা সম্পর্কে
ফ্রিজ কেনার পূর্বে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরী যেমন কিছু ফ্রিজ আছে যায় এক মাস অন্তর অন্তর পরিষ্কার করতে হয়, আবার কোন ফ্রিজ আছে তিন মাস অন্তর পরিষ্কার করতে হয়। যে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে ঝামেলা কম আপনি সেটা কিনতে পারেন।
তাছাড়া আপনি যে ফ্রিজটি কিনছেন সেই ফ্রিজ কি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে সে সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলো তোয়ালে বা টিস্যু অথবা নরমাল কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা যায়, তার জন্য আপনি সাধারণ সাবান পানি বা ডিটারজেন্ট পানি ইউজ করতে পারেন।
আবার অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলোতে আপনি চাইলেই সবকিছু ব্যবহার করে ফ্রিজ পরিষ্কার করা যায় না। এই ধরনের ফ্রিজগুলো ইউজ করা একটু কষ্ট সাধ্য। তাই আপনি যদি সহজে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে পারেন তাহলে সেই অনুযায়ী ফ্রিজ কিনতে পারেন।
ফ্রিজের যেকোন পার্টস সম্পর্কে
একটি ফ্রিজ তৈরি হয় অনেকগুলো যন্ত্রাংশের মাধ্যমে। ফ্রিজের একেকটি যন্ত্রাংশ এক এক কাজ করে থাকে। তবে মূলকথা হলো ফ্রিজে যেসকল পার্টস ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো সহজলভ্য কিনা তা দেখতে হবে।
কারণ ফ্রিজের যেকোন সময় যেকোন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনাকে প্রথমে বুঝে নিতে হবে আপনি যে ফ্রিজটি কয় করছেন সেই ফ্রিজটি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহজলভ্য কিনা বা নষ্ট হলে সহজেই ঠিক করা যাবে কিনা।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সম্পর্কে
ফ্রিজ কেনার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলো কিনতে হবে। কপার কনডেন্স উন্নত মানের কম্প্রেসার ব্যবহার করা ফ্রিজগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলো ব্যবহার করলে বিদ্যুতের বিল অনেক কম আসে। কিছু কিছু ফ্রিজের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে বলাও থাকে। আবার কিছু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ গুলোতে স্টারমার্ক দেওয়া থাকে।
কপার কন্ডেন্সার ও কম্প্রেসার
ফ্রিজ কপার কন্ডেন্সার তথা তামার তার যুক্ত আছে কিনা সেই সম্পর্কে যাচাই করে নিতে হবে। কপার কন্ডেন্সার ফ্রিজের অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে।
- অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
- ফ্রিজ অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- ফ্রিজের গ্যাস লিকেজ হয় না
- খাবার খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়।
- তারে কোন মরিচা ধরে না।
- ক্যাপিলারি জমা হয় না।
তাছাড়া আপনার ফ্রিজে ব্যবহার করা কম্প্রেসরটিও ভালো কিনা দেখতে হবে।কারন একটি কম্প্রেসরে সাধারণত ১০ বছরের গ্যারান্টি দেওয়া থাকে। এটি যত ভালো হবে আপনার ফ্রিজ ততো বেশি দিন টিকবে এবং কম বিদ্যুৎ বিল আসবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটির গুরুত্ব।
ইনভার্টার টেকনোলজির কম্প্রেসার যুক্ত এবং উন্নত মানের কপার বাইন্ডিং তার দ্বারা তৈরিকৃত কম্প্রেসার গুলো মূলত উন্নত মানের কম্প্রেসার হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
ফ্রিজে থাকা গ্যাস সম্পর্কে
নিচের টেবিলে দেখতে পাচ্ছেন R600a ভালো মানের গ্যাস। তাই চেষ্টা করতে পারেন R600a জাতীয় গ্যাসের ফ্রিজ কিনতে। বিভিন্ন ধরনের স্টিকার দেওয়া থাকে ন্যানো হেলথ কেয়ার টেকনোলজির স্বাস্থ্য সম্মত ফ্রিজগুলোতে সেই সম্পর্কে। তাই আপনাকে সবসময় চেষ্টা করতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশের জন্য ভালো এমন ফ্রিজ ক্রয় করার।
গ্যাস | বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী | গ্লোবার ওয়ার্মিংয়ে প্রভাব | ওজন স্তরের ক্ষতি করে |
R600a | হ্যাঁ | ৩ | না |
R290a | হ্যাঁ | ৩ | না |
R600a | না | ১৪৩০ | না |
ফ্রস্ট ফ্রিজ ও নন ফ্রস্ট ফ্রিজ সম্পর্কের
ফ্রস্ট ফ্রিজ
এই ফ্রিজগুলো তে বরফ জমে থাকে যার ফলে, বিদ্যুৎ চলে গেলেও খাবার অনেক সময় পর্যন্ত ভালো রাখতে পারে এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। তবে এই ধরনের ফ্রিজগুলোর বরফ মাসে একবার পরিষ্কার করতে হয়।
নন ফ্রস্ট ফ্রিজ
এধরনের ফ্রিজ গুলোতে সাধারণত বরফ জমে না যার ফলে বরফ জমানোর জন্য ফ্রিজ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করে এবং বিদ্যুৎ ছাড়া খাবার ৩-৪ ঘণ্টার বেশি ভালো থাকতে পারে না। তবে এতে ফ্রিজ পরিষ্কার করা বা খাবারে বরফ জমে যাওয়ার মত ঝামেলা থাকে না।

সর্বশেষ কথা এটাই যে, আপনি সেই ফ্রিজ কিনেন না কেন সেই সম্পর্কে ভালো ধারনা নিয়ে তারপর কিনবেন।