তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম ” Ocimum Sanctum “
আমরা সবাই জানি তুলসী পাতা আমাদের অনেক উপকারে আসে কিন্তু তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে কোন উপকার গুলো পাওয়া যায় এগুলো সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। অনেক আগে থেকেই ঔষধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার ব্যাপকভাবে হয়ে আসছে।
তুলসী পাতার রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। তুলসী পাতা মারাত্মক সব বড় রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হূদরোগ ইত্যাদি রোগ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।
এই পাতা নানা ধরনের গুণে ভরা বলে সেই আদিকাল থেকে ঔষধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে একটি ঘরে তুলসী পাতা প্রতিদিন চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
তুলসী পাতায় যেমন হাজারো রকমের উপকার রয়েছে তেমনি অল্প কিছু অপকার রয়েছে। আজকে আমরা জানবো তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
তুলসী পাতার উপকারিতা
মাথা ব্যথা দূরীকরণে –
মাথা ব্যথা দূর করার জন্য তুলসী পাতা অনেক উপকারী কারণ তুলসী পাতা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়। এছাড়া মাংসপেশির খিঁচুনি রোধ করে তুলসী পাতার বিশেষ উপাদান সমূহ।
সর্দি কাশি নিরাময় –
সর্দি, কাশি ও ঠান্ডা নিরাময়ে তুলসী পাতা মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে মধুর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। এবং চায়ের মধ্যে তুলসী পাতার রস দিয়ে খেলেও ঠান্ডা-কাশি দূর হয়ে যায়।
গলায় কফ জমে গেলে প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা দিয়ে চা খেলে বা মধুর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে কফের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
মানসিক চাপ কমাতে –
তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কিছু কিছু দেশে তুলসী পাতা কে মানসিক চাপমুক্ত করার ঔষধ বলা হয়ে থাকে। তুলসী পাতায় থাকা উপাদান সমূহ নার্ভকে শান্ত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
হার্টের জন্য উপকার –
হার্টের নানা ধরনের সমস্যা দূরীকরণে তুলসী পাতা অনেক উপকার করে থাকে। তাছাড়া তুলসী পাতা রক্ত জমাট বাঁধা এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচায়।
ত্বকের যত্নে তুলসী পাতা –
অনেক আগে থেকেই ত্বকের যত্নে তুলসী পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, এসেন্সিয়াল অয়েল গুলো এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে থাকে, যা বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে তুলসী পাতা খুবই কার্যকর। তুলসী পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও ত্বকের জ্বালাপোড়া কমে।
টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী –
শরীরের কোথাও অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি কে টিউমার বলে, যা থেকে পরবর্তীতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতা অনেক কার্যকর। তুলসী পাতার রয়েছে রেডিও প্রটেক্টিভ (Radioprotective) এর মত উপাদান যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে।
আবার তুলসী পাতায় উপস্থিত ফাইটোকেমিক্যাল যেমন, রোসমারিক এসিড, লিউটিউলিন, মাইরেটিনাল এবং এপিজেনিন উপাদান যা ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম। তুলসী বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দূর করতে অনেক কার্যকরী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় তুলসী পাতা –
তুলসী পাতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে থাকে। এটি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক পরিমাণে বেড়ে যায় যার ফলে আমাদের শরীরে সহজে কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারে না। এতে রয়েছে হাজারো পুষ্টি গুনাগুন যা আমাদের অনেক বড় রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে সবসময় সতেজ রাখে।
পুরুষের বীর্য বৃদ্ধিতে –
তুলসীর বীজ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে পুরুষের দেহে বীর্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
মাসিক পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানে –
অনেক মহিলা রয়েছে যাদের দীর্ঘদিন পিরিয়ড হয় যার ফলে সহজে রক্তপাত থামে না। তুলসী গাছের শিকড় গুড়া করে সাদা পানের সাথে মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চুলের যত্নে তুলসী –
আমাদের অনেকের চুল পেকে যাওয়া বা চুলপড়া সমস্যা রয়েছে। তুলসী পাতা চুলের যত্নে অনেক কার্যকরী। এটি অল্প বয়সে চুল পড়া রোধে অনেক ভালো কাজ করে কারণ এতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা চুল পড়া সহ আরো অনেক কিছু সমস্যার সমাধান করে।
তুলসী পাতার অপকারিতা
সকল ধরনের ভেষজ উপাদানই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তুলসী পাতার ক্ষেত্রেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন,
অনেক ক্ষেত্রে তুলসী পাতা গ্রহণ করলে নারীদের বন্ধ্যাত্ব সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থার সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করা উচিত নয়।
অধিক পরিমাণে তুলসী পাতা ব্যবহার রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে স্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কোন অপারেশন বা সার্জারির অনেকদিন আগে থেকেই তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উত্তম।
তাদের জন্য তুলসী পাতা না খাওয়া উত্তম যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যার ফলে রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে।
অধিক পরিমাণে তুলসী খেলে বমি ভাব, মুখ ও গলা জ্বলার মতো সমস্যা হতে পারে।