জীবনে চলার পথে ছেলে-মেয়ে সবারই টাকা প্রয়োজন। বর্তমানে ছেলেদের মত মেয়েরাও উপার্জন করে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অবদান রাখছে।
আজকে আমরা আলোচনা করবো মেয়েদের জন্য বিজনেস আইডিয়া কি হতে পারে সেই বিষয় নিয়ে।
কোন বিষয়ে নিয়ে আপনার দক্ষতা আছে সেই বিষয়ের উপর ব্যবসা শুরু করলে ভালো হয়। যদি কোনো বিষয়ে দক্ষতা না থাকলে তাহলে আপনি সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে ভালো করতে পারবেন।
কি নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন সেটি সিলেক্ট করার ব্যাপারে একটু স্মার্ট হতে হবে। মেয়েদের সংসার করার পাশাপাশি কোন ধরনের ব্যবসা করলে ভালো করতে পারবে আসুন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
মেয়েদের জন্য বিজনেস আইডিয়া
অনলাইনে জামা কাপড়ের ব্যবসা
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ছেলে-মেয়ে সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। সবাই কম বেশি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করা। ব্যবসা করার জন্য এগুলো হতে পারে ভালো একটি মাধ্যম।
এর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পেজ খুলতে হবে। পেইজের মধ্যে বিভিন্ন রকম জামা কাপড় বিক্রি করতে পারেন। এছাড়া সরাসরি লাইভে এসে মহিলাদের জামা কাপড় বিক্রি করতে পারেন।
কাস্টমাররা জামা কাপড় অনলাইনে অর্ডার দিবে সেগুলো তাদের বাড়িতে ডেলিভারি দিতে হবে। ডেলিভারি আপনি নিজে দিতে পারেন অথবা তার জন্য লোক রাখতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণ জামা কাপড় বিক্রি করতে পারবেন। বর্তমানে এই ব্যবসার অনেক চাহিদা রয়েছে।
অনলাইনে খাবারের ব্যবসা
সাধারণত মেয়েরা খাবার তৈরিতে পারদর্শী। আপনি চাইলে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে সেগুলো অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। অনলাইনে নিজের প্রোফাইলে অথবা পেজ খুলে সেখানে নিজের তৈরি করা খাবারের ছবি তুলে আপলোড করতে পারেন।
আপনি যদি খুব সুস্বাদু এবং আকর্ষণীয় সব খাবার তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনার কাস্টমারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এভাবে আপনি অনলাইনে খাবার ব্যবসায় অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
কুটির শিল্প ব্যবসা
নানা ধরনের কুটির শিল্প রয়েছে। এই ব্যবসার প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। সাধারণত মহিলারা এই ব্যবসায় দক্ষ হয়ে থাকে। যদি আপনার কুটির শিল্পে দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনি প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
বেশিরভাগ মানুষই নকশিকাঁথা পছন্দ করে। আপনি নিজে নকশি কাঁথা তৈরি করতে পারেন অথবা যারা এই কাজে দক্ষ তাদের নিয়োগ দিতে পারেন। এরপর এই নকশিকাঁথা বিভিন্ন দোকানে অথবা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।
এছাড়া বিভিন্ন নকশী রুমাল, বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ফুলদানি, কলমদানি, কুলা, ঢাকনা, ধামা, ঝুড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্প মধ্যে পড়ে। এসব জিনিস তৈরি করে অনলাইনে অথবা বাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতে পারেন।
বিউটি পার্লারের ব্যবসা
বর্তমান সময়ে এটি খুবই জনপ্রিয় এবং লাভজনক একটি ব্যবসা। সবাই সুন্দরের পূজারী। তাই সবাই সাজতে পছন্দ করে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে অধিকাংশ মেয়েরাই বিউটি পার্লারে সাজতে পছন্দ করে।
এই ব্যবসা শুরু করার আগে আপনি প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসা করার জন্য বেশি পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। আপনি চাইলে আপনার বাড়ির পাশের রাস্তায় দোকান দিয়ে অথবা দোকান ভাড়া নিয়ে অথবা নিজ বাড়িতে বিউটি পার্লার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
আভ্যন্তরীণ নকশাকার
যদি আপনার মধ্যে শুনছিল তারা থাকে এবং সাজানো-গোছানো ব্যাপারে দক্ষতা থাকে তাহলে আপনার জন্য আভ্যন্তরীণ নকশা করার বিজনেস হতে পারে ভালো একটি বিজনেস আইডিয়া।
এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। অভ্যন্তরীণ নকশাকারা ঘরের ভিতরে ফাঁকা জায়গাগুলি কি কি দিয়ে সাজালে সুন্দর হবে তা ঠিক করে। যেমনঃ ঘরের ছোটখাটো জিনিসপত্র, ঘরের রং, নকশা ইত্যাদি।
ধনী লোকেরা সাধারণত অভ্যন্তরীণ নকশা করে থাকে। আর এই কারণে এখান থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার নিজের বেশি টাকা লাগবে না।
ইউটিউব চ্যানেল খুলে ব্যবসা
বর্তমানে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচুর টাকা ইনকাম করা যাচ্ছে। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বানানো যায়। যেমনঃ রিএকশন ভিডিও, ব্লগিং ভিডিও, রান্নাবান্নার ভিডিও, বিনোদনমূলক ভিডিও, টেকনোলজি ভিডিও, শিক্ষামূলক ভিডিও, খেলাধুলা সম্পর্কিত ভিডিও ইত্যাদি।
যে বিষয়ে আপনি পারদর্শী সে বিষয়টি আপনি বেছে নিবেন। যে বিষয় নিয়ে আপনি ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন সেই বিষয় নিয়ে ভিডিও বানাবেন। আপনার নিজস্ব কোন ব্যবসা থাকলে সেই ব্যবসার পণ্যের ভিডিও ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়তে পারেন। ফলে পণ্যের বেচাকেনা বৃদ্ধি পাবে।
কনটেন্ট রাইটিং
আপনি যদি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন অথবা লেখালেখিতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কনটেন্ট রাইটিং করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারন।
এই কাজটি আপনি ঘরে বসে খুব সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মোবাইল, কম্পিউটারের মাধ্যমে করতে পারবেন। আপনার যদি এ বিষয়ে জানা না থাকে তাহলে আপনি ইউটিউব অথবা বিভিন্ন পেজ থেকে কনটেন্ট রাইটিং এর লেখালেখি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বর্তমান সময়ে কনটেন্ট রাইটিং এর প্রচুর কাজ রয়েছে।
সেলাই ব্যবসা
আমাদের দেশের মেয়েরা সবাই কম বেশি সেলাই করতে পারে। আপনার মধ্যে যদি জামা কাপড় বানানোর দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনি কারো কাছ থেকে এটি শিখে নিতে পারেন।
আপনি যদি জামা কাপড় বানানোতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিজে একটি ট্রেইলার দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অথবা আপনি নিজের বাড়িতে জামাকাপড় বানিয়ে বিভিন্ন দোকানে বা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।
এর জন্য আপনার বেশি পুঁজি দরকার হবে না। অল্প পুঁজিতে অধিক পরিমাণ ব্যবসা করতে পারবেন। একটি সেলাই মেশিন কিনে বিভিন্ন মানুষের জামাকাপড় বানিয়ে দিতে পারেন।
শিক্ষকতা
শিক্ষকতা অত্যন্ত সম্মানজনক একটি কাজ। এর মাধ্যমে আপনি সমাজের সেবা করার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আপনি যদি যে কোন একটি বিষয়ের উপর পারদর্শী হন তাহলে আপনি প্রাইভেট টিউশন পড়াতে পারেন নিজের বাড়িতে।
আপনি যদি বাচ্চাদের ভালোভাবে পড়াতে পারেন তাহলে আপনার এলাকার সকল বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের আপনার কাছে পড়াতে চাইবে। এছাড়া আপনি চাইলে ইউটিউব ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষকতা করাতে পারবেন।
ফ্যাশন ডিজাইনের ব্যবসা
প্রতিটা মানুষই চায় তার জামাকাপড় যেন একটু সবার থেকে আলাদা ডিজাইন করা থাকে। তাকে দেখতে জানো সবার থেকে আলাদা এবং বেশি সুন্দর লাগে।
আর এর জন্য তারা দ্বারস্থ হয় ফ্যাশন ডিজাইনারের কাছে।
বর্তমান সময়ের ফ্যাশন ডিজাইনের অনেক চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি সুন্দর সুন্দর এবং ইউনিক ডিজাইন করতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত সফলতা অর্জন করতে পারবেন। এভাবে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
শোপিস তৈরির ব্যবসা
বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরি করে আপনি সেগুলো বিভিন্ন দোকানে অথবা নিজের দোকান দিয়ে বিক্রি করতে পারেন।
আর এই ব্যবসার প্রচার প্রচারণার জন্য আপনি ফেসবুক ইউটিউব এর মতন সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিতে পারেন। আপনি ঘরে বসেই শোপিস তৈরি করে এই ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
সবশেষে বলতে চাই সততা ও নিষ্ঠার সাথে পরিশ্রম করে যাবেন তাহলে সফলতা আসবে। ব্যবসায় লাভ লস হবে তাই হতাশ হলে হবে না ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।