সব ব্লগাররাই গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। কারন গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার জন্য প্রথমে গুগল এডসেন্স অনুমোদন করে নিতে হয়। গুগল এডসেন্স পাওয়ার সঠিক উপায় জানা না থাকলে বারবার আবেদন করলেও এডসেন্স অনুমোদন পাওয়া যায় না। আর তাই গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় জেনে নিতে হবে।
অনলাইন ভিত্তিক সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সংস্থা হচ্ছে এডসেন্স (AdSense)। বিজ্ঞাপনে বেশি সুবিধা পাওয়ার জন্য এবং উচ্চমূল্যের ক্লিক রেট এর জন্য আর্টিকেল রাইটার বা ব্লগাররা তাদের ব্লগে এডসেন্স ব্যবহার করে। আর এডসেন্স ব্যবহার করে টাকা ইনকাম করা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ব্লগাররা এডসেন্স কিভাবে যুক্ত করতে হয় সে সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকার কারণে গুগল এডসেন্স অনুমোদন পায় না।
কিছু সহজ কিছু উপায় এবং ধৈর্য ধারণ করে চেষ্টা করলে অল্পদিনে খুব সহজেই গুগল এডসেন্স অনুমোদন করা যায়। আজকের পোস্টে আমরা গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য কি কি করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
এডসেন্স আবেদন করার আগে কি করতে হবে
অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ডোমেইন। বেশিরভাগ নতুন ব্লগার তাদের ব্লগে সাবডোমেইন ইউজ করে গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করে থাকে। আর গুগল এ আবেদন সরাসরি বাতিল করে দেয়। আর তাই আপনাকে একটি ভালো মানের কাস্টম ডোমেইন কিনে নিতে হবে।
অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আপনার ব্লগের বয়স ছয় মাস হলে সবচেয়ে ভালো হয়। অর্থাৎ আপনার ডোমেইন এর বয়স ছয় মাস হওয়ার পর এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। এর কম সময়ে আবেদন করলে গুগল এডসেন্স অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ব্লগের থিম আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারের সহজ এরকম হলে সব চেয়ে ভালো। কারণ এর ফলে পাঠক সহজে যেকোনো ধরনের ডিভাইস ও যেকোনো সাইজের ডিভাইস থেকে আপনার আর্টিকেল পড়তে পারবে। ব্লগের লোডিং স্পিড অবশ্যই ভালো হতে হবে তাহলে আপনার ব্লগে বেশি ভিজিটর পাবেন। এটা আপনাকে এডসেন্স পেতে সাহায্য করবে।
আপনার ব্লগ বা পেইজের এসইও এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনার ব্লগের প্রত্যেকটি পোস্ট সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি হলে এটা আপনাকে এডসেন্স অনুমোদন পেতে সাহায্য করবে। গুগল এডসেন্স এর রোবট রয়েছে যা আপনার ব্লগকে স্ক্যান করে নেবে।
ব্লগ / পেইজ এর মূলেই হচ্ছে আর্টিকেল বা পোস্ট। আপনার ব্লগে বেশি ভিজিটর পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভাল মানের কন্টেন্ট (Content) লিখতে হবে। ব্লগে নিয়মিত ভাল মানের কনটেন্ট পোস্ট করতে হবে।
আপনার ব্লগে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ টি ভালোমানের ইউনিক পোস্ট থাকার পর এডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন তাহলে এডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। আপনার ব্লগে যতগুলো ক্যাটাগরি রয়েছে প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে পাঁচটি করে পোস্ট হতে হবে।
আপনার ব্লগের প্রতিটি পোস্ট পরিমাণ মতো লেখা থাকতে হবে। আপনার প্রতিটি পোস্টে ২৫০+ শব্দ থাকতে হবে। শুধু কোনরকম ২০-২৫ টি পোস্ট করলেই হবে না। গুগল এডসেন্স অনুমোদন দেওয়ার পূর্বে গুগল বট জেনে নেবে আপনার প্রতিটি পোস্টে কোন মানের কি পরিমান লেখা আছে। তাই গুগল এডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার জন্য অবশ্যই পরিমাণমতো লেখা লিখতে হবে।
ব্লগের জন্য About Us, Privacy Policy এবং Contact Us এর মত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পেজ রাখা আবশ্যক। বিশেষ করে প্রতিটি ব্লগে অবশ্যই Privacy Policy পেজ রাখতেই হবে। তা আপনার ব্লগের জন্য অবশ্য এ ধরনের সকল পেজ যুক্ত করতে হয়।
Google Account এবং Contact Us পেইজে অবশ্যই আপনার নাম, বয়স এবং ইমেইল এড্রেস লিখতে হবে। এর ফলে গুগল এডসেন্স টিম আপনার আবেদন রিভিউ করার সময় আপনার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। এছাড়া গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ব্লগে ভিজিটর বেশি পেলে অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য সহজ হয়ে যায়। কারন গুগল বেশি পছন্দ করে যে সকল ব্লগ বা পেজে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিজিটর আসে। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে ভালোভাবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) অনুসরণ করতে হবে।
আপনার ব্লগে প্রতিদিন ২০০+ ভিজিটর থাকলে গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার সহজ হবে। কারণ ভিজিটর কম হলে এডসেন্স পাওয়া যায় না।
আমরা অনেক সময় Pay Per Cost বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে থাকি আমাদের ব্লগে। যদি এরকম হয় তাহলে এসএমএস অনুমোদন করবে না। তাই গুগল এডসেন্স পেতে হলে গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার পূর্বে তা সরিয়ে নিতে হবে। অ্যাডসেন্স অনুমোদন হওয়ার পর অন্যান্য যেকোনো বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারবেন।
গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার উপায়
নিয়মিত নতুন নতুন কন্টেন্ট আপনার ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। সার্চ ইঞ্জিন রোবট নতুন আর্টিকেল ইনডেক্স (Index) করার জন্য রেডি থাকে। সার্চ ইঞ্জিন রোবটের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য নিয়মিত নতুন নতুন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
এর ফলে আপনি আপনার ব্লগ পোস্টে বেশি বেশি ভিজিটর পাবেন। আর বেশি ভিজিটর পাওয়া মানে গুগল এডসেন্স অনুমোদন পাওয়া।
ব্লগে যে কোন ধরনের কোন রকম পোস্ট করলে হবে না। আপনার কনটেন্ট এর মান ভালো হতে হবে। আপনাকে অবশ্যই সবার থেকে আলাদা নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। আর এই কাজটি যদি আপনি নিয়মিত করতে থাকেন তাহলে আপনার ব্লগে ভিজিটর বাড়বে। ভিজিটররা যখন আপনার ব্লগে ভালো ইউনিক পোস্ট পাবে তখন পুনরায় আবার তারা আপনার ব্লগে ভিজিটর করবে।
আপনার ব্লগের জন্য অবশ্যই এসইও ফ্রেন্ডলি (SEO) আর্টিকেল হতে হবে। অর্থাৎ পোস্টের টাইটেল ভালোভাবে লিখতে হবে, পোস্টের বানান সঠিক ভাবে লেখা, পোস্টের ভিতরে ভালো মানের কনটেন্ট শেয়ার করা, পোস্টের ভিতরের ছবি গুলো Alt Tag দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
এই বিষয়গুলো যদি ভালো ভাবে অনুসরণ করেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিন সহজে আপনার ব্লগের প্রতিটি পোষ্টের ভাষা বুঝতে পারবে। এর ফলে ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন এর কাছে আপনার ব্লগ ভালো হতে হবে।
এডসেন্স পলিসি (AdSense Policy) ভালোভাবে পড়ে এডসেন্স এর নিয়ম-নীতি গুলো বুঝতে হবে। পলিসি পড়ার পর যদি দেখেন আপনার ব্লগ টি এডসেন্স এর সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে হয়েছে তাহলে এডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন। আর এরকমটা না হলে এডসেন্স এর জন্য আবেদন করা থেকে বিরত থাকবেন। এডসেন্স এর পলিসি অনুসারে আপনার ব্লগকে তৈরি করে কিছুদিন পরে আবেদন করুন।
প্রতিদিন যখন আপনার ব্লগে নতুন নতুন ভিজিটর অর্থাৎ ইউনিক ভিজিটর আসবে তখন ব্লকটি সকলের কাছে পরিচিতি পাবে। যদি নতুন কেউ আপনার ব্লগে ভিজিট করতে আসে আর সে যদি ভাল মানের ইউনিক কন্টেন্ট না পায় তাহলে সে চলে যাবে।
এর ফলে আপনি ইউনিক ভিজিটর হারাবেন। তাই ভালো মানের ইউনিক কন্টেন্ট আপনার ব্লগে নতুন নতুন ভিজিটরদের বেশি সময় অবস্থান করাতে সাহায্য করবে। ইউনিক ভিজিটর অ্যাডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
উপরের নিয়ম গুলো সঠিকভাবে মেনে চললে খুব সহজে আপনি গুগল এডসেন্স অনুমোদন পেয়ে যাবেন। ধৈর্য ধরে নিয়ম-নীতি মেনে ব্লগিং করে থাকলে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। আশা করি আমাদের পোস্টের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন এডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার জন্য কি কি করতে হবে।