এইচএসসি পাস করার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু হয় কোন বিষয় নিয়ে পড়লে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য এই চিন্তা ভাবনা আসা খুবই স্বাভাবিক। কোন বিষয় নিয়ে অনার্স বা স্নাতক সম্মান করলে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে তা নিয়ে আজকের পোষ্টে আলোচনা করা হবে।
শুধু ভালো বিষয় নিয়ে পড়লে হবে না ভালো ফলাফলও করতে হবে। দেখে নেই কোন কোন বিষয় নিয়ে পড়লে কোন চাকরি পাওয়া যাবে। আমাদের দেশে বিষয় ভিত্তিক চাকরির সংখ্যা সীমিত। বিজ্ঞান, আর্টস, কমার্স এর মধ্যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে চাকরি ক্ষেত্রে একটু বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।
মানবিক বা আর্টস বিভাগের পড়ে কি হওয়া যাবে
ইংরেজি
ইংরেজি নিয়ে পড়লে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ভালো। কারণ আপনি যে সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে থাকেন না কেন যদি ইংরেজিতে দক্ষ হন তাহলে চাকরি পরীক্ষায় আপনি ভাল করবেন।
বাংলা/ ইতিহাস/ অর্থনীতি/ রাষ্ট্রবিজ্ঞান
এই বিষয়গুলোর মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে পড়লে ব্যাংকে চাকরি পাওয়া যায়। আর বাকি বিষয়গুলোর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ছাড়া কোথাও বিষয়ভিত্তিক জব নেই। তাই এগুলোকে চ্যানেল সাবজেক্ট বলা যায়।
আইন
এটি এমন একটি বিষয় যে বিষয়ে সবসময় চাকরি চাহিদা থাকে। তবে আইন বিষয় নিয়ে যদি পড়তে চান তাহলে আগে সিদ্ধান্ত নিন আপনি আইনজীবি হবেন কিনা। তাছাড়া আপনি বিভিন্ন কোম্পানির লীগের এডভাইজার হতে পারেন। জুডিশিয়াল সার্ভিসে ভালো সুযোগ আছে।
সমাজ কল্যাণ/সমাজকর্ম
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে বর্তমান কল্যাণ কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে বেশ সচেতন। আর তাই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে ওয়েলফেয়ার অফিসার নামে চাকরির সুযোগ রয়েছে। যারা সমাজ কল্যাণ বা সমাজকর্ম নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে থাকে তারা এখানে বেশি অগ্রাধিকার পায়।
নৃবিজ্ঞান
এই বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয় বিশ্বের সকল অঞ্চলে সাংস্কৃতির মানুষদের নিয়ে। এই বিষয়ে স্নাতক করলে এনজিও তে চাকরি করার সুযোগ আছে।
কমার্স বা ব্যবসায় শিক্ষা পড়ে কি হওয়া যাবে
একাউন্টিং
অ্যাকাউন্ট পড়লে চাকরি পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে কারণ যে কোন প্রতিষ্ঠানে একাউন্ট্যান্ট দরকার হয়। একাউন্টিং নিয়ে অনার্স শেষ করার পর ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট এর জন্য একটি প্রফেশনাল ডিগ্রী (ACCA, FCMA) করতে পারেন।
এর ফলে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোতে শীর্ষ পদে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একাউন্টেন্ট মানে শুধু টাকার হিসাব রাখে ওরকম না তারা মালিকপক্ষের খরচ কমাতে সাহায্য করে।
মার্কেটিং
মার্কেটিং এমন একটি ব্যবসা যেখানে বেতন বেশি আবার প্রমোশনও দ্রুত পাওয়া যায়। মার্কেটিং বিষয় নিয়ে স্নাতক করা মানুষের চাহিদা বেশি। যেকোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে মার্কেটিং বিভাগকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
কারণ মার্কেটিং করার ফলে পণ্য বেচাকেনা হয় আর পণ্য বেচাকেনা হলে কম্পানি আয় করতে পারে। ব্যবসা বিভাগ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পাস করে মার্কেটিং নিয়ে অনার্স পড়লে ভালো করা যায়।
ফ্রীল্যান্স এন্ড ব্যাংকিং
প্রাইভেট ব্যাংক গুলোতে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিষয় নিয়ে অনার্স করা লোকদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এছাড়া এই বিষয় নিয়ে স্নাতক করলে নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাত গুলোতে চাকরির ভালো সুযোগ আছে।
ম্যানেজমেন্ট
হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে সবচেয়ে বেশি চাকরি পাওয়া যায় ম্যানেজমেন্ট পড়লে। অনার্স সম্পূর্ণ করার পর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে MBA করলে ভাল হয়। আমাদের দেশের প্রচুর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রচুর হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের লোক লাগে।
বিজ্ঞান বিভাগ বা সাইন্স নিয়ে পড়লে কি হওয়া যাবে
বর্তমানে বিজ্ঞান বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, কম্পিউটার সাইন্স, আইটি, কৃষিবিষয়ক সাবজেক্ট গুলো নিয়ে পড়লে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ফার্মেসি
বর্তমানে অনেকেই ফার্মেসি সাবজেক্টকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে কারণ এই বিষয়ে জব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফার্মেসি নিয়ে অনার্স কমপ্লিট করা মাত্রই চাকরি। এই প্রফেশনে প্রমোশনও ভালো।
রসায়ন/ফলিত রসায়ন
বাংলাদেশের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস গুলোতে প্রচুর রসায়নের লোক নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন কেমিক্যাল কোম্পানি, গার্মেন্টের ইটিপি, ডায়িং হাউসগুলোতে অনেক চাকরি আছে। এই সেক্টর গুলোতে বেতনও ভালো দেওয়া হয়। বিজ্ঞানের এই বিষয় নিয়ে অনার্স করলে আপনি মাস্টার সম্পূর্ণ না করেও চাকরি করবেন।
পদার্থ বিজ্ঞান
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (Bcsir) কিছু চাকরি রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের উপর। কিন্তু সমস্যা হলো সেখানে চলে স্বজনপ্রীতি ও ইউনিভার্সিটি প্রীতি। ইন্সট্রুমেন্ট সাপ্লাই কোম্পানি (AQC, Technoworth, Tradesworth, Invent) আছে যারা পদার্থ বিজ্ঞানের কিছু শিক্ষার্থীদের নেয় তাও সীমিত পরিমাণে।
গণিত/ পরিসংখ্যান
চাকরি ক্ষেত্রে গণিতে আলাদা কোন ফিল্ড নেই তবে শিক্ষকতা করার জন্য গনিত সেরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ভালো মানের গণিত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের বেতনের পাশাপাশি টিউশনি করে প্রতি মাসে ৩০-৬০ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। পরিসংখ্যান বিষয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওতে লোক নেয়।
উদ্ভিদবিদ্যা/প্রাণিবিদ্যা
সত্যি কথা বলতে উদ্ভিদ ও প্রাণী বিদ্যার মত পিউর বিজ্ঞান সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরি ক্ষেত্রে কোন লাভ নেই। খুব কম কোম্পানিতে কৃষি বিষয়ক কিছু চাকরি আছে।
কৃষি/ভেটেরিনারি/পশু পালন/ইঞ্জিনিয়ারিং
বিভিন্ন এগ্রো কোম্পানিগুলোতে উপরের বিষয়গুলো নিয়ে অনার্স করা লোকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর যদি আপনি ভেটেরিনারি ডাক্তার হন তাহলে তো কোন কথাই নেই। আবার অন্যদিকে বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে তুলনামূলক প্রতিযোগিতা কম হয়।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কোন ধরনের চাকরি পাওয়া যাবে
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এই ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে চাকরির অনেক সুযোগ রয়েছে। কারণ প্রতিটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। তাছাড়া পাওয়ার সেক্টর আছে। আর এই সেক্টরে গুলোতে প্রচুর লোক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
নামি দামি গাড়ি কোম্পানিতে অনায়াসে চাকরি পাওয়া যায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে। এছাড়া বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে চাকরি পাবেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
বর্তমান সময়ে মানুষ প্রচুর পরিমাণে দালান-কোটা, শিল্প-কারখানা গড়ে তুলছে। আর এ কারণে বর্তমান ও ভবিষ্যতের খুব সহজেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ভাল চাকরি পাওয়া যাবে। এছাড়া আপনার নিজের প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রয়েছে এবং দিন দিন আরো এরকম ফ্যাক্টরি তৈরি করা হচ্ছে। আর তাই গার্মেন্টস সেক্টরে প্রচুর চাকরি রয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ভালো বেতনের ভালো চাকরি পাবেন।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করলে গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল সহ ভালো মানের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ আছে। আর এই কোম্পানিগুলোতে বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে। বর্তমান সময় শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ হলো কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
যাদের সমুদ্রের ঘুরার শখ হয়েছে তারা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং করতে পারেন। কারণ মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা ছয় মাস জাহাজে এবং ছয় মাস দেশে কাটায়। এই পেশায় ভালো বেতন পাওয়া যায়।
এমবিবিএস বা ডাক্তারি
সবাই চায় তাদের সন্তান এমবিবিএস বা ডাক্তারি নিয়ে পড়ুক। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করা যায় ডাক্তারি পেশায়। সরকারি কলেজগুলোতে ডাক্তারি পড়ার খরচ কম আর বেসরকারি কলেজে ডাক্তারি পড়ার খরচ অনেক বেশি। এমবিবিএস পাশ করার সাথে সাথে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী নিলে ভালো করতে পারবেন।
ডেন্টাল
যদি এমবিবিএসে সুযোগ না পান তাহলে ডেন্টাল হলো তার বিকল্প। এই পেশায় মোটা অঙ্কের টাকা ইনকাম করা যায়। আপনি চাইলে নিজের এলাকায় চেম্বার খুলে ডাক্তারি শুরু করতে পারেন।
ফিজিও থেরাপি
বর্তমানে ফিজিও থেরাপির অনেক চাহিদা রয়েছে। এই পেশার ভবিষ্যৎ ভালো। CRP তে এই বিষয়ে পড়ানো হয়। ঢাকার শাহবাগ ও মিরপুর এই দুটি সিআরপি শাখা রয়েছে।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট, হসপিটালিটি, ট্যুরিজম
এই পেশায় আপনি যেমন ঘুরার সখ আনন্দ মেটাতে পারবেন আবার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আমাদের দেশের পর্যটন খাত ততটা উন্নত নয় বলে এই পেশায় চাকরির পরিমাণ কম। পার্ট টাইম জবের জন্য এই পেশাটি বেস্ট।
সবশেষে বলতে চাই যে সাবজেক্টে পড়েন না কেন একটি ভাল প্রতিষ্ঠান পড়ার চেষ্টা করবেন। শুধু ভালো সাবজেক্ট আর ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হলেও হবে না ভালো করে পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করতে হবে।