বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যার ফলে এখন বহুল আলোচিত হয়ে থাকে ফ্রিল্যান্সিং কি হারাম।
তো আজকের আর্টিকেল আমরা ফ্রিল্যান্সিং কি হারাম বিষয়ে ইসলাম কি বলে বা আসলেই কি এটা হারাম কিনা সে সম্পর্কে জানব।
ফ্রিল্যান্সিং কি
প্রথমে অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে যে ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) শব্দের অর্থ মুক্তপেশা।
ফ্রিল্যান্সিং মূলত অনলাইনে আয়ের একটি জনপ্রিয় উৎস যার মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থানে বসে আয় করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং এর সব থেকে বড় সুবিধা হল কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অধীনে না থেকে মুক্তভাবে কাজ করা যায়।
যারা এ ধরনের কাজ করে তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলে আর যারা এই ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে কাজ করিয়ে নেয় তাদেরকে বায়ার বলে।
অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে তারা তাদের কাজের জন্য আপনাকে অফার করবে তখন আপনি তাদের টাকার মাধ্যমে সেই কাজগুলো করে দিবেন আর এটাই মূলত ফ্রিল্যান্সারদের কাজ।
ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল
যদি আপনি সঠিক গাইডলাইন মেনে কাজ করেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং অবশ্যই হালাল। কারণ আমরা জানি নিয়মমাফিক কাজ না করলে হালাল কাজ হারামে পরিণত হয়ে যায়।
তাই ইসলামিক শরীয়ত মতে কাউকে ধোঁকা না দিয়ে বা কষ্ট না দিয়ে যদি কোন কাজ করা হয় তাহলে সেটি অবশ্যই হালাল।
তবে ইসলামিক শরীয়ত মেনে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কিছু কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা হারাম। যেমন, যারা গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করে মাঝেমধ্যে তাদের অনেক ধরনের ছবি আঁকতে হয়, যেমন মানুষের ছবি বা পশু পাখির ছবি।
যা আমাদের ইসলামিক বা মুসলমানদের শরীয়ত মতে মানুষ বা পশু পাখির ছবি আঁকা হারাম।
তাই যদি আপনি এই কাজগুলো এড়িয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনে অন্যান্য কাজ যেমনঃ কোম্পানির লোগো বা বইয়ের কভার লোগো অথবা এমন কোন জিনিস ডিজাইন করেন যেগুলো ইসলামিক শরীয়ত মতে হারাম না তাহলে আপনি সেই কাজগুলো করতে পারেন।
ইসলামে বলা আছে যে আমানত কি! যে বায়ার আপনাকে আমানত হিসেবে কাজটি দিবে যদি তার কাজটি আমানত শুরু করতে পারেন তাহলে সেটা হালাল হবে। বায়ার যেভাবে চাইবে তার কাজটা ওইভাবে করে দিতে হবে কারণ এর বিনিময়ে সে আপনাকে পারিশ্রমিক দিচ্ছে।
আর অবশ্যই টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার দুর্নীতি করা যাবে না। কোন মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে না। যে কাজটি নিষেধ রয়েছে সেটা করা যাবে না।
ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কি হালাল
আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে ইসলামিক শরীয়ত মেনে ফ্রিল্যান্সিং করলে সেই ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা অবশ্যই হালাল হবে।
যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি কারো ক্ষতি বা দেশ ও জাতির ক্ষতি করে নিজে টাকা উপার্জন করেন তাহলে সেটা হারাম হবে।
যেহেতু আমরা আমাদের কাজের বিনিময় পারিশ্রমিক নিচ্ছি সেহেতু ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা হালাল। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে তাই সঠিক মাধ্যম বা পন্থা ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করলে সেটা অবশ্যই হালাল হবে।
বর্তমানে কিছু কিছু জায়গায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে ধোকা দিয়ে অর্থ উপার্জন করা হয় যেটা নিঃসন্দেহে হারাম। এমন কোন কাজ করা যাবে না যেগুলো ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।
যেমন অর্ধ নগ্ন বা নগ্ন ছবি বা ভিডিও নিয়ে কাজ করা যাবে না। অশ্লীল কোন বিষয় নিয়ে কাজ করা, অ্যাডাল্ট, ডেটিং বা পর্ন সাইট নিয়ে কাজ করে টাকা উপার্জন করা হারাম।
কেননা ইসলামের এসকল বিষয়কে হারাম বলেছে। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কোন খারাপ কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যাবেনা তাহলে সেটাও হারাম হবে।
সুতরাং সবশেষে বলা যায়, সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে ফ্রিল্যান্সিং হালাল যদি সঠিক গাইডলাইন মেনে ফ্রিল্যান্সিং করা হয়।
অনলাইনে হোক বা অফলাইনে হোক সব জায়গায় আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। যে সকল বিষয় ইসলামে হারাম বলা হয়েছে সেগুলো মেনে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা উচিত। তাই ফ্রিল্যান্সিং করার পূর্বে আমাদের এই বিষয়ে খুটিনাটি জেনে শুরু উচিত।