ছাগল বাংলাদেশের অন্যতম একটি গৃহপালিত প্রাণী। ছাগল পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। দরিদ্র মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে ছাগল।
ছাগলের তুলনায় গরুর অনেক বেশি দাম হয়ে থাকে তাই যাদের কম বুঝি তারা ছাগল পালন করতে পারে। এজন্য ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়।
আসুন জেনে নেই কিভাবে ছাগল পালন করলে লাভজনক হওয়া যাবে
ছাগল পালন করতে বেশি খরচ হয় না। এটি পালনের জন্য বেশি জায়গা লাগে না। যারা দরিদ্র বেকার চাকরি নেই তারা ছাগল পালন করে লাভজনক হতে পারবেন । ছাগল পালনের জন্য বেশি পুঁজির দরকার হয় না।
প্রচলিত পদ্ধতিতে ছাগল পালন
মাঠে, বাগানে, রাস্তার পাশে বেঁধে বা ছেড়ে গ্রামে ছাগল পালন করা হয়। ছাগলকে গাছের পাতা ও ভাতের মার খেতে দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়তি খাদ্য দেয়া হয় না।
থাকার বা অন্য কোন ঘরে রাতে ছাগলকে আশ্রয় দিয়ে থাকে। সাধারণত যারা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ তারা এভাবে ছাগল পালন করে থাকে।
আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল পালন
আপনি যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান তাহলে আপনাকে আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল পালন করতে হবে।
প্রথমে আপনাকে ভাল জাতের ছাগল নির্বাচন করতে হবে। পরিশ্রম, শিক্ষা এবং বিচক্ষণতার সাথে ছাগল পালন করতে হবে।
আপনাকে সেড তৈরি, ভ্যাকসিনেশন ব্যবস্থা এবং ঘাস চাষের উপর গুরুত্ব দিতে হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল চাষ করলে খরচ একটু বেশি হবে। তবে আপনি হবেন বাণিজ্যিকভাবে লাভবান।
শুরুর দিকে খামারের জন্য বেশি ছাগল না নিয়ে দশ-বারোটি ছাগল দিয়ে শুরু করতে পারেন।
ছাগল গুলোকে ক্রস করানোর জন্য একটি ভাল জাতের পাঠা সরবরাহ করে রাখবেন। খামারটি ভালোভাবে নির্মাণ করবেন যাতে করে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি, কুকুর, শিয়াল ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে। ছাগলের ঘর যেন দক্ষিণ দিকে খোলা যায় এরকম করে বানাবেন।
আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল পালনে খামার তৈরির কিছু তথ্য
খামারের প্রবেশ করার সময় জুতা বা জীবানুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিবেন।
কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ দিন ছাগলগুলোকে সেডে রাখবেন। পশু ডাক্তার দেখাবেন যদি চিকিৎসার দরকার পড়ে তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থা করবেন। আর যদি কোন রোগ না দেখা দেয় তাহলে মূল খামারে ছাগল গুলো নিয়ে যাবেন। প্রতিদিন খামার পরিষ্কার করবেন।
ছাগল সাধারণত বিভিন্ন গাছের পাতা খেয়ে থাকে। তাই ইপিল ইপিল, কাঁঠাল, কাসাভা ইত্যাদি গাছ লাগাতে পারেন।
প্রতিদিন ছাগলের মলমূত্র ও অন্যান্য ময়লা আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য উত্তম সুবিধাযুক্ত ঘর তৈরি করবেন।
খোলামেলা ছাগল পালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অবশ্যই আপনাকে বুদ্ধিমত্তার সাথে চিন্তাভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
সবসময় ছাগলের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখতে হবে। যদি আপনার খামারের ছাগলের রোগ হয় তাহলে রোগ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেকোনো রোগ দেখা মাত্রই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করবেন। তাহলে আপনি লাভের আশা করতে পারবেন।
পিপিআর গপক্স খুরা রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের জন্য যথারীতি টিকা প্রদান করবেন। সকল ছাগলকে বছরে তিনবার নির্ধারিত মাত্রায় কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করবেন।
কিভাবে বুঝবেন আপনার ছাগলটির সুস্থ আছে? সুস্থ ছাগল মাথা উঁচু করে এবং দলবদ্ধ ভাবে চলাফেরা করে। ছাগলের চামড়া নরম, চকচকে এবং মসৃণ হবে। ৭০ থেকে ৯০ বার সুস্থ ছাগলের নাড়ির স্পন্দন হবে।