পাসপোর্ট করার নিয়ম, পাসপোর্ট করতে কি কি লাগবে ও কত টাকা খরচ হবে এসব বিস্তারিত এখন আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ১৮ বছরের নিচের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC)
- ১৮ বছরের বেশির জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
এগুলো ছাড়াও আরো কিছু অতিরিক্ত কাগজ লাগতে পারে যেমনঃ পেশা, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি।
পেশাগত সনদ। যেমনঃ স্টুডেন্ট হলে স্টুডেন্ট আইডি, ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স, কৃষক হলে জমির খতিয়ান, সরকারি চাকরিজীবী হলে সরকারি আদেশ (NOC/GO)
স্বামী বা স্ত্রীর নাম পাসপোর্টে নতুন যুক্ত করতে চাইলে কাবিননামা।
পূর্বে কোন পাসপোর্ট করে থাকলে সেই পাসপোর্ট এর মূলকপি অথবা ফটোকপি।
আবেদনকারীর বয়স ১৫ বছরের নিচে হলে পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হয়।
আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র দিতে হয়।
আবেদনকারীর বয়স ৬ বছরের নিচে হলে পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি দিতে হবে।
পাসপোর্ট আবেদন ফরম
প্রথমে টাকা জমা দিয়ে অনলাইনে পাসপোর্ট করতে হয়। কারণ অনলাইনে ফরম পূরণ করার সময় জমাদানের রিসিট নম্বর এবং জমা দেয়ার তারিখ দিতে হয়।
আবেদন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন – ইপাসপোর্ট আবেদন
প্রথমে আপনি আপনার নামের পুরো অংশ যেমনঃ Give name ও Surname পূরণ করুন।
আপনার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্রে যেভাবে নাম আছে সেভাবেই লিখতে হবে।
এরপর ঠিকানা পূরণের করার সময় পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিবেন। হোল্ডিং সহ ঠিকানা ব্যবহার করুন।
আপনি বা আপনার বাবার স্থায়ী ঠিকানা যেটা ওইটা স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করবেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় জমির বা ফ্ল্যাট এর দলিল লাগতে পারে।
আগের পাসপোর্ট থাকলে সেই পাসপোর্ট এর তথ্য দিবেন।
আইডি ডকুমেন্টস (ID Documents) এ আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের নম্বর সতর্কতার সাথে পূরণ করবেন।
প্যারেন্টাল ইনফর্মেশন (Parental information) এ আপনার বাবা মায়ের নাম দিবেন। পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার না দিলেও সমস্যা নেই।
স্পাউস ইনফর্মেশন (Spouse information) এ বিবাহিত হলে কাবিননামা দিতে হবে।
জরুরী যোগাযোগ (Emergency contact) এখানে আপনি আপনার পরিবার বা আত্মীয় স্বজনের যে কারো নাম দিতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না। মূলত আপনি যখন দেশের বাইরে থাকবেন তখন জরুরী ভিত্তিতে দেশে কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য এটা নেওয়া হয়।
পাসপোর্ট অপশনস (Passport options) এখানে আপনি আবেদনের ধরন ও পৃষ্ঠা সংখ্যা নির্বাচন করবেন। সে অনুপাতে পাসপোর্ট ফি দেখাবে।
ডেলিভারি অপশনস (Delivery options) এবং অ্যাপোয়েন্টমেন্ট (appointment) এ আপনি যে কেন্দ্রে আবেদন করেছেন সেখানে কোন অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লাগে কিনা তা দেখাবে।
ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লাগে কিন্তু ঢাকার জেলাগুলোতে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লাগে না।
যদি নিয়মিত আবেদনে দুই মাসের মধ্যে তারিখ না পান সে ক্ষেত্রে জরুরি সিলেক্ট করে দেখুন তারিখ পান কিনা। আপনার যদি দ্রুত দরকার হয় তাহলে জরুরি বা এক্সপ্রেস (Express) আবেদন সিলেক্ট করে আবেদন সাবমিট করুন।
তারপর সুপার এক্সপ্রেস ফি প্রদান করুন। এভাবে আপনি কোন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই যেকোনো দিন আবেদন জমা দিতে পারবেন।
আপনার আবেদন ফরমে কোন ভুল হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য আপনাকে একটা সামারি দেখাবে। আপনি ভালোভাবে আবেদন ফরম টি চেক করার পর ফরমটি সাবমিট করে দিন।
আপনি ইচ্ছা করলে সামারি ডাউনলোড অথবা প্রিন্ট করে রাখতে পারেন।
সবশেষে অ্যাপ্লিকেশন ফরমের শেষ পৃষ্ঠায় আপনার স্বাক্ষর ও তারিখ দিন।
খুব সাবধানের সাথে ফরমটি পূরণ করতে হবে কারণে একটু ভুল হলেই আবেদন বাতিল হবে। একবার আবেদন সাবমিট হলে সেটা ডিলিট না হওয়া পর্যন্ত আর আবেদন করতে পারবেন না।
আবেদন ফরমের কোন তথ্য সংশোধন করার জন্য সংশোধন আবেদন করতে হবে। বারবার আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে তাগাদা দিতে হবে। সুতরাং এসব হয়রানি এড়াতে সতর্কতার সাথে পাসপোর্ট ফরম পূরণ করুন।
পাসপোর্ট করার খরচ
পৃষ্ঠা ৪৮ – মেয়াদ ৫ বছর – নিয়মিত (২১ দিন) ৪০২৫ টাকা – জরুরি (৭ দিন) ৬৩২৫ টাকা – অতিব জরুরী (২ দিন) ৮৬২৫ টাকা
পৃষ্ঠা ৪৮ – মেয়াদ ১০ বছর – নিয়মিত (২১ দিন) ৫৭৫০ টাকা – জরুরি (৭ দিন) ৮০৫০ টাকা – অতিব জরুরী (২ দিন) ১০৩৫০ টাকা
পৃষ্ঠা ৬৪ – মেয়াদ ৫ বছর – নিয়মিত (২১ দিন) ৬৩২৫ টাকা – জরুরি (৭ দিন) ৮৬২৫ টাকা – অতিব জরুরী (২ দিন) ১২০৭৫ টাকা
পৃষ্ঠা ৬৪ – মেয়াদ ১০ বছর – নিয়মিত (২১ দিন) ৮০৫০ টাকা – জরুরি (৭ দিন) ১০৩৫০ টাকা – অতিব জরুরী (২ দিন) ১৩৮০০ টাকা
দুইভাবে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া যায়। ব্যাংকের মাধ্যমে ও – চালান অ্যাপের মাধ্যমে।
১৮ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের লোকেরা শুধু মাত্র পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন। যারা নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করছেন তারা অতি জরুরী আবেদন করতে পারবে না। সঠিক সময়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন হওয়া এবং সব তথ্য ঠিক থাকার উপর নির্ভর করছে উপরের উল্লেখিত দিনে পাসপোর্ট পাওয়া।
পাসপোর্ট ফরমের প্রিন্ট কপি, সত্যায়িত ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদি ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে পাসপোর্ট অফিসে।
সকালের দিকে পাসপোর্ট অফিসে যাবেন কারণ সে সময় ভিড় কম থাকে। এরপর একটি নির্দিষ্ট রুমে গিয়ে সিরিয়াল আসলে ছবি তুলবেন। ছবি তোলার পর ফিঙ্গার প্রিন্ট দিবেন। কোন রুমে যেতে হবে সেজন্য আপনি সেখানে দায়িত্বরত সেনা সদস্যকে জিজ্ঞাসা করলে তারাই বলে দিবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে, একটি রিসিট পাওয়ার পর ১৫ বা ৩০ দিনের মধ্যে আপনি পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। রিসিটের নিচের লাইনের নিয়ম অনুসারে মোবাইল দিয়ে মেসেজ করে আপনার পাসপোর্ট এর বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন। মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবেন EPP স্পেস Application ID লিখে পাঠিয়ে দিন 26969 নাম্বারে।
নির্ধারিত দিনে রিসিটটি নিয়ে পাসপোর্ট নিতে হবে।