বিয়ে একটি ফরজ কাজ। প্রাপ্তবয়স্ক সকল নারী পুরুষকে বিয়ে করতে হয়। বিয়ের মত পবিত্র কাজ অবশ্যই আমাদের সুন্নত তরিকায়, বিয়ের সঠিক নিয়ম মেনে করতে হবে। বর্তমান সমাজে আমার নানা ধরনের বিয়ের নিয়ম নীতি দেখতে পাই যেগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। আসুন জেনে নেই বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম গুলো কি কি।
সর্বপ্রথম শরিয়া অনুযায়ী নীতিমালা মেনে পাত্রী দেখতে হবে।
রাসূল (সাঃ) বলেন, যদি কেউ কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্য মেয়েকে দেখে তবে তা দূষণীয় নয়, যদিও ওই মেয়ে এ সম্পর্কে অবগত নয়।
কন্যার পরিচয় জানতে চাওয়া বৈধ। তবে অনেক সময় ধরে বসিয়ে রাখা ঠিক নয় এবং বারবার লম্বা সময় ধরে তার প্রতি দৃষ্টি রাখা ও অবৈধ। ইসলামে যেগুলো বৈধ ওই বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না।
বিয়ের মজলিস অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই মোহরানা ঠিক করে বিবাহ করতে হয়। বিবাহের মধ্যে খুতবা দেওয়া হবে।
মেয়ের নিকট থেকে মেয়ের অভিভাবক বিয়ে হওয়ার পূর্বে দুইটি বিষয়ের অনুমতি নিয়ে রাখবে।
- প্রথমটিঃ প্রস্তাবিত ছেলের সাথে মেয়ের বিয়েতে মত আছে কিনা।
- দ্বিতীয়টিঃ মেয়ে পক্ষ থেকে মেয়ের পিতা বা অন্য কোনো অভিভাবক ছেলের নিকট বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। অনুমতি নিয়ে এসে মেয়ের পিতা বা ভাই বা অভিভাবক নিজেই খুতবা পড়ে উকিল হয়ে মজলিসে ছেলেকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে।
আর মেয়ের পিতা বা ভাই বা অভিভাবক খুতবা পড়তে না পারলে তাহলে কোন আলেম সাহেব খুতবা পড়াবেন।
এরপর মেয়ের অভিভাবক ছেলে নিকট প্রস্তাব দিবে যে, আমি আমার অমুক মেয়েকে এত টাকা দেন মোহরের বিনিময় বিবাহ দিলাম। এরপর ছেলে সাক্ষীদের সামনে কবুল বলবে। সমাজের অনেক জায়গায় তিনবার কবুল বলানো হয় এর কোন দরকার নেই একবার কবুল বললেই যথেষ্ট।
যদি কোন কারণে মেয়ের অভিভাবক ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে না পারে তাহলে যিনি খুতবা পড়াবেন তিনি মেয়ে পক্ষ থেকে অনুমতি নিয়ে ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দেবেন।
ছেলে স্পষ্ট শব্দে কবুল বলবে যেন উপস্থিত সাক্ষী শুনতে পারে। এরপর উপস্থিত সবাই নতুন দম্পতির জন্য দোয়া করবে। এভাবে বিবাহ শেষ হওয়ার পর উপস্থিত সবার মাঝে খুরমা অথবা মিষ্টি বন্টন করে দেয়া হবে। সব শেষে দোয়া এবং মুনাজাতের মাধ্যমে মজলিস শেষ করা উত্তম।
ছেলেদের বাড়িতে কালিমা বা বিবাহ ভোজ করা সুন্নাত। মেয়েদের বাসায় এসব আয়োজন করার নজির নেই। কিন্তু যদি মেয়ে পক্ষ নিজ ইচ্ছায়, নিজ সন্তুষ্টিতে ওলিমা বা বিবাহ ভোজ আয়োজন করে তাহলে তা জায়েয আছে।
আমাদের সমাজে বিয়ের মধ্যে ইসলামবিরোধী অনেক কর্মকাণ্ড করা হয়। যেমনঃ গান বাজনা বাজানো, পুরুষের বেপর্দায় চলাফেরার। এসব কিছুই ইসলামের সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ।
বিয়ের মধ্যে আমাদের সমাজে অনেক ধরনের কুপ্রথা ও কুসংস্কার পালন করে থাকে।
মেয়ের অনুমতি ছাড়া সাক্ষী পাঠানো। এসবের দরকার নেই এতে মেয়ের পর্দার খেলাফ হয়।
বিবাহের সময় পাত্র-পাত্রী উভয়কে তিনবার করে কবুল বলানো হয় যার কোন দরকার নেই একবার বললেই যথেষ্ট। কবুল বলার পর আমিন বলানো হয় শরীয়তে এটির কোন ভিত্তি নেই।
বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর মজলিসে উপস্থিত সকলকে বরের সালাম দিতে হয় এর শরীয়াতে কোন ভিত্তি নেই।
বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর খেজুর ছিটানো যেতে পারে যদি ঝগড়া বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
গেট সাজিয়ে বরের কাছ থেকে টাকা আদায়, খাওয়ার সময় বরের কাছ থেকে টাকা চাওয়া এসব কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। এসব কিছুই মূলত হিন্দুয়ানী প্রথা।
বিবাহ পড়ানোর পূর্বে মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে যৌতুকের নামে বিভিন্ন জিনিসপত্র চাওয়া এসব কিছু অন্যায় এবং নির্লজ্জতার কাজ।
নতুন বউকে বাড়িতে আনার পর বিভিন্ন কায়দায় বরণ করা হয়। ধান, দুবলা, ঘাস, দুধের সর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় নববধূকে ঘরের ঢুকানোর সময়। এসব কিছু অমুসলিমদের কাজ মুসলমানদের এসব করা জায়েজ নেই।
বিবাহের একদিন পর মেয়ের বাড়িতে বর আড়াই দিন থাকে। যেটাকে আড়াই উল্লাহ বলা হয়। এসব পালন করা ইসলামে জায়েজ নেই। এগুলো সব নাজায়েজ প্রথা।
ঈদের সময় বা অন্য কোন মৌসুমে মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে আবার ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী যেমনঃ জামা-কাপড়, বিভিন্ন খাবার ইত্যাদি পাঠানো জরুরী মনে করা হয়। অনেকেই এসব দেয়ার সামর্থ্য না থাকা সত্বেও ঋণ করে, সুদে টাকা নিয়ে এগুলা দেয়। এসব কিছু করা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সীমালংঘন ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের সকলের উচিৎ এসব কুপ্রথা ত্যাগ করা।
বর্তমান সমাজে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই গুনাহ এর ছড়াছড়ি। বিয়েকে কেন্দ্র করে গান-বাজনা, ভিডিও, সাউন্ড বক্স,ছবি তোলা ইত্যাদি হারাম কাজ করে থাকে। এছাড়া বিবাহ অনুষ্ঠানে ছোট বড় সকল বয়সের মেয়েরা সাজসজ্জা করে নিজেকে পুরুষের সামনে বিকশিত করে এবং যুবক যুবতীর অবাধ মেলামেশার মতন বেপর্দা আর বেহায়াপনা কাজ করে থাকে। এতে করে উপস্থিত সকল নারী-পুরুষই গুনার হকদার হয়।
বিয়ের পর থেকে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত মেয়ের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী মেয়েরা সবাই একসাথে হয়ে হৈ হুল্লা করে এবং বিভিন্ন উপায় বরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে এবং নির্লজ্জ হাসি-তামাশায় মেতে ওঠে। এসব কিছু করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবে হারাম।
অনেক জায়গায় নতুন বউকে জামাই নিজে অথবা তার ভগ্নিপতি অথবা ছোট ভাই গাড়ি বা পালকি থেকে নামিয়ে ঘরে নিয়ে আসে। এ ধরনের কাজ হারাম এবং নাজায়েজ।
এছাড়া বিবাহের পূর্বে কথাবার্তার দিন ছেলের হাতে আংটি অথবা মেয়েরা আংটি পড়ানো ইসলাম সমর্থন করে না। এসব কিছু অমুসলিমদের প্রথা।