আমাদের দেশের জনসংখ্যার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে পণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে।
যার ফলে পাইকারি ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে পাইকারি ব্যবসার অনেক চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ পাইকারি ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
আপনিও কি পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারতেছেন না। কোন সমস্যা নেই আমি আজকে আপনাদের সাথে পাইকারি ব্যবসার কিছু আইডিয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
পাইকারি ব্যবসা কাকে বলে
উৎপাদনকারী থেকে পণ্য বা মালামাল নিয়ে সেই পণ্য খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়াকে পাইকারি ব্যবসা বলে।
উৎপাদনকারী ও খুচরা বিক্রেতার মধ্যবর্তী মাধ্যম হলো পাইকারি বিক্রেতা। একবার নতুন অবস্থায় সফলতা পাওয়ায় পাইকারি ব্যবসা করতে আপনার মধ্যে বেশ কিছু বিষয় থাকা প্রয়োজন। সেগুলো হলোঃ ধৈর্য শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা, ইনভেস্টমেন্ট করার ক্ষমতা,সংরক্ষণ করার জায়গা, ট্রেড লাইসেন্স।
আসুন এবার জেনে নেই, পাইকারি ব্যবসা করতে হলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি কাজ করতে হবে।
পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া
সবার আগে আপনাকে উৎপাদনকারীর সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখতে হবে। আপনাকে এমন প্রতিষ্ঠান বা জায়গা খুঁজে নিতে হবে যেখান থেকে আপনি আপনার কাংক্ষিত পণ্যটি কম দামে ক্রয় করতে পারবেন।
পণ্য ক্রয় করার পর আপনাকে গুলো ভালো করে সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর নিজ দায়িত্বে আপনাকে এ পণ্যগুলো বিক্রি করতে হবে। আপনার পণ্যগুলি এরকম ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে হবে যেখানে আপনি বেশি মুনাফা বা লাভ করতে পারবেন।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা লাগতে পারে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি কোন পণ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান।
এক এক পণ্যের ক্ষেত্রে একেক রকমের ইনভেস্টমেন্ট লাগবে। আপনি চাইলে এক লাখ টাকার ব্যবসা শুরু করতে পারেন আবার ১০ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি আপনার সামর্থ্যমতো ইনভেস্টমেন্ট করবেন।
আসুন এবার দেখি নিই লাভজনক কিছু পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া
কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা
সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষই কাপড় ব্যবহার করেন। ফলে এর চাহিদাও খুব বেশি। কাপড়ের ব্যবসা লাভজনক ব্যবসা। পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের ভালো নামডাক রয়েছে।
এই শিল্পে প্রচুর অর্থ আয় করে আসছে বাংলাদেশে। ফলে দিন দিন আমাদের দেশে গার্মেন্টস শিল্পের চাহিদা বেড়েই চলছে। এসব দিক বিবেচনা করে আপনি কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
তার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে এরকম একটি কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে হবে যারা আপনাকে ন্যায্য মূল্যে পাইকারী রেটে কাপড় দিতে পারবে।
এরপর আপনি কাপড় ক্রয় করে সেগুলো আপনার সংরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ করবেন। আপনার সুবিধা মত আপনি সেই কাপড় গুলো পরবর্তীতে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করতে পারবেন।
কাঁচামালের ব্যবসা
তরিতরকারির ব্যবসা মূলত কাঁচামালের ব্যবসা। কাঁচামালের ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। তরিতরকারি মূলত গ্রাম অঞ্চলের কৃষকেরা উৎপাদন করে থাকে।
আপনি চাইলে সরাসরি জমি থেকে কৃষকের কাছ থেকে এসব তরিতরকারি কিনে নিতে পারেন। পরে এই কাঁচামাল গুলো আপনি বিভিন্ন বাজারে সাপ্লাই দিতে পারেন। এভাবে আপনি প্রচুর মুনাফা লাভ করতে পারবেন।
মুদিখানা পণ্যের ব্যবসা
বর্তমানের বাংলাদেশে ৮৭১৯১ টি গ্রাম আছে। প্রতিটি গ্রামে প্রায় দু একটি করে মুদি দোকান আছে।
সুতরাং আপনি বুঝতে পারছেন মুদির দোকানে সামগ্রির চাহিদা কত বেশি। মুদি দোকানে বিক্রি হয় এরকম পণ্য কিনে মুদির দোকানে সেগুলো বিক্রি করবেন।
যেমন মুদি দোকানে তেল সাবান ইত্যাদি পন্য বিক্রি হয়। আপনি তেল বা সাবান উৎপাদনকারী কারখানা থেকে তেল সাবান কিনে সেগুলো মুদির দোকানে বিক্রি করতে পারেন।
এরকম আরো শত শত পণ্য আছে যেগুলো আপনি উৎপাদনকারী কারখানা থেকে কিনে মুদির দোকানে বিক্রি করতে পারবেন।
জুতার ব্যবসা
জুতার ব্যবসা একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক ব্যবসা। দিন দিন এই ব্যবসার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। জুতা আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি বস্তু তাই এর প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।
জুতার ব্যবসা করে অধিক পরিমাণে লাভ করা সম্ভব। আপনি চাইলে নিজে জুতা তৈরি করতে পারেন। আর তা সম্ভব না হলে আপনি জুতা তৈরির কারখানা থেকে কম মূল্যে জুতা কিনে সেগুলো বেশি দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
স্টেশনারি পণ্যের ব্যবসা
স্টেশনারি ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যার চাহিদা পূর্বেও ছিল এখনও আছে আর সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। কাগজ, খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি আমরা যেসব দোকান থেকে কিনে সেইসব দোকানকে স্টেশনারি দোকান বলে।
যারা শিক্ষিত কিন্তু বেকার তাদের জন্য এই ব্যবসাটি আইডিয়াল ও অধিক লাভজনক ব্যবসা। এই ব্যবসাটি আপনি কম পুঁজি দিয়ে শুরু করতে পারবেন। খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে ভালো সম্পর্ক করতে পারলে এ ব্যবসায় আপনি অনেক মুনাফা বা লাভ করতে পারবেন।
কসমেটিক্স সামগ্রী ব্যবসা
আমরা মূলত কসমেটিক সামগ্রী বলতে শুধু নারীদের সামগ্রী বুঝি কিন্তু বর্তমানে নারী-পুরুষ উভয়ের কসমেটিক্স সামগ্রিরর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এসব পণ্যের ক্ষেত্রে নারীদের চাহিদা বেশি থাকে।
সবার জন্যই এই ব্যবসাটি একটি উপযুক্ত ব্যবসা। কসমেটিক্স সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি কম দামে পণ্য কিনে সেগুলো বেশি দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণে মুনাফা লাভ করতে পারবেন।
ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা
এমন কোন জায়গা নাই যেখানে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী নেই। আর তাই দিন দিন মানুষের ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা বেড়েই চলছে। টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, লাইট, ব্যাটারি, সুইচ, ইস্ত্রি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দিয়ে আপনি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
ডিলার এর সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট কম দামে কিনে সেগুলো স্টোর করে রাখতে পারেন। পরে অর্ডার অনুযায়ী খুচরা বিক্রেতার নিকট তা বিক্রি করে দিতে পারেন।
প্রোডাক্টের কোয়ালিটিও সার্ভিস ভালো হলে এ ব্যবসায় আপনি অধিক লাভ করতে পারবেন ফলে আপনাকে এই ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা
বর্তমান সময়ে খেলনার ব্যবসা একটি বিরাট ব্যবসা। বাচ্চাদের জন্য এখন তৈরি করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক, কাঠ ও প্লাস্টিকের আকর্ষণীয় খেলনা।
যারা এসব খেলনা তৈরি করছে তাদের থেকে আপনি খুব কম দামে খেলনা ক্রয় করতে পারবেন। এসব খেলনা সঠিক দাম গ্রাহকেরা জানে না তাই এসব ব্যবসায় লাভ অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় অনেক বেশি।
আপনি এইসব খেলনা কিনে সেগুলো আপনার নিজ এলাকায় বিভিন্ন খেলনার দোকান ও আশেপাশের শহরের খেলা দোকানে সাপ্লাই দিতে পারেন। আর এভাবে আপনি অন্যদের মতো নিজে এই ব্যবসায় অধিক পরিমান ইনকাম করতে পারবেন।
অটোমোবাইল পার্টস ও টায়ারের ব্যবসা
যতদিন যানবহন থাকবে ততদিন অটোমোবাইল পার্টস ও টায়ারের প্রয়োজন পড়বে। যানবাহনের চাকা দুইটা হোক আর চারটা হোক টায়ার লাগবেই। এই ব্যবসা লাভের পরিমাণ নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই।
এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে প্রায় সবার ঘরেই মোটরসাইকেল আছে। মোটরসাইকেলের বিভিন্ন পার্টস রয়েছে। আর এগুলো বিভিন্ন সময় খারাপ হয় আপনি এইসব পার্টস ডিলারের কাছ থেকে কম দামে কিনে অটোমোবাইল বা গাড়ি মেরামতের দোকানে অধিক দামে বিক্রি করতে পারেন।
এই ব্যবসার জন্য আপনি ছোট একটা কাজ করতে পারেন খুচরা অটোমোবাইল পার্টস বিক্রেতার দোকানে আপনি কয়েক মাস কাজ করতে পারেন যাতে আপনি অটোমোবাইল এর পার্টস সম্বন্ধে আইডিয়া চলে আসে।
বিল্ডিং নির্মাণ পণ্যের ব্যবসা
মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি মৌলিক চাহিদা হচ্ছে বাসস্থান। আর বাসস্থানের জন্য মানুষ বাড়ি ঘর ও বিল্ডিং নির্মাণ করে।
বাড়িঘর ও বিল্ডিং নির্মাণ করতে অনেক কিছুর দরকার হয়। যেমন টিন, সিমেন্ট, বালি, পাথর, রড ইত্যাদি। এসব পণ্যের মধ্যে থেকে আপনি যে কোন একটি পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
যেমন সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানি থেকে সিমেন্ট কিনে সেগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করতে পারেন। এই ব্যবসার জন্য যেমন অনেক মূলধন ও পুঁজির দরকার হয় ঠিক তেমনি লাভের পরিমাণও বেশি।