কলমি শাক কেন খাবেন? কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান রয়েছে যা অন্যান্য শাকসবজি থেকে ভালো এবং পুষ্টিগুণ বেশি।
আজকে আমরা জানবো কলমি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে।
কলমি শাক মূলত একটি আশ জাতীয় গোত্রের খাবার। এতে খাদ্য উপাদানের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকায় অনন্য শাক হিসেবে পরিচিত। কলমি শাকের গুনাগুন বলে শেষ করা যাবেনা। তবে কয়েকটি গুণের কথা নিয়ে আজকে আলোচনা করব।
এই শাক আপনার ঘরের পাশে অন্যান্য শাকের মতোই লাগাতে পারেন। অথবা বর্ষাকালের শেষদিকে গ্রাম অঞ্চলের বিলের মধ্যে এই শাক অনেকটা পাওয়া যায়। তাই তুলনামূলক কলমি শাক দামে অনেক সস্তা এবং যেকোনো জায়গায় সহজেই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ কলমি শাক, থানকুনি, কচু কিংবা পুঁইশাক এর চেয়েও পুষ্টিগুণ বেশি ধরে রাখে।
কলমি শাক কিভাবে খাবেন
আপনি অন্যান্য তরকারির পাশাপাশি কলমি শাক ভর্তা অথবা ভাজি বানিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া তরকারিতে কলমি শাক খুব ভালো মানায়। এবং তরকারির সাথে আলাদা করে ঝোল রান্না করেও সহজে ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। আবার পাকোড়া এবং বড়া তৈরি করেও খাওয়া সম্ভব।
কলমি শাকের উপকারিতা মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ।
প্রতি 100 গ্রাম কলমি শাকে কি উপকার পাবেন
প্রতি 100 গ্রাম কলমি শাকে যা পাওয়া যাবে তা হল সোডিয়াম, পটাশিয়াম, খাদ্যআঁশ, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ।
এগুলোর সব গুলোই কিছু কিছু করে আপনি কলমি শাকে পাবেন।
চলুন কলমি শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক
- কলমি শাকের ঔষধি গুণ আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং চোখ ভালো রাখে।
- আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথা ও অনিদ্রা রোগে ভোগেন, তাহলে কলমি শাক খাওয়ার মাধ্যমে মাথা ব্যথা ও অনিদ্রা দূর করা সম্ভব।
- প্রতিটি শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। তাই কলমি শাক আপনার হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে। ছোট শিশুদের কলমি শাক এর মাধ্যমে ক্যালসিয়াম খাওয়ালে তাদের হাড় ছোট থেকেই মজবুত হয়।
- আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কলমি শাকের গুরুত্ব অপরিসীম। যেহেতু কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে তাই এটি আপনার শরীরের এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
- অসুস্থ রোগীরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকে। তাদের শারীরিক দুর্বলতা সবচেয়ে বড় প্রভাব হচ্ছে খাদ্যশক্তি। কলমি শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি। যা অসুস্থ রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। তাছাড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে কলমি শাক অনন্য। রাতকানা রোগীদের ক্ষেত্রে কলমি শাক প্রচুর ভূমিকা পালন করে দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে।
- যারা রক্ত শূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য কলমি শাক দারুণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে লৌহ থাকায় আপনার সারা দেহে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করতে কলমি শাকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
- আগেই বলেছি কলমি শাক যেহেতু আঁশ জাতীয় খাবার তাই আঁশে ভরপুর। এই শাকের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করার ক্ষমতা থাকে। এবং শরীরের স্বাভাবিক হজম খাদ্য পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় অনেকাংশে সাহায্য করে।
- আপনার শরীরের কোন অংশে কেটে গেলে কলমি শাকের পাতা আদা সহ বেটে কাটা জায়গায় লাগিয়ে দেন। তাছাড়া ফোড়া হলেও এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন।
- হাত পা জ্বালাপোড়া করলে এবং প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হলে কলমি শাকের রস তিন চার চামচ পরিমাণ সপ্তাহখানেক খেলে জ্বালাপোড়া কমে যায়। তাছাড়া অন্যভাবেও খাওয়া যায়। কলমি শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে সপ্তাহখানেক খেলে জ্বালাপোড়া কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আমাশা রোগের ক্ষেত্রেও কলমি শাকের ভূমিকা অপরিসীম। আমাশা রোগ হলে কলমি পাতার রসের সঙ্গে সামান্য আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেলে আমাশা রোগ ভালো হয়ে যায়।
- জন্মের পর যদি মায়ের বুকের দুধ শিশু না পায় তাহলে কলমি শাক মাকে খাওয়ালে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ উৎপন্ন হয়।
- যারা খুশকির যন্ত্রনায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রেও কলমি শাকের সমাধান রয়েছে। আপনার মাথার খুশকি দূর করতে নিয়মিত কলমি শাক খান এতে কার্যকরী ভূমিকা দেখতে পাবেন।
আসলে প্রত্যেকটি শাকের অনেক পুষ্টি গুণ থাকে। বেশিরভাগ শাকের ভিটামিন এ এবং লৌহ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান থাকে। তাই অন্তন্ত দিনের এক বেলার খাবারের সাথে আপনি যেকোন ধরনের শাকসবজি জাতীয় খাবার রাখতে পারেন। নিয়মিত শাকসবজি খেলে আপনার শরীরের গঠনগত দিক অনেক উন্নত হবে। চেহারা এবং শরীরের চামড়ার সাপে এত সহজে প্রভাব পড়বে না।