যদি কেউ বলে আপনাকে এখন থেকে মোবাইল এবং ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতে হবে। আপনি কি পারবেন? আমার মনে হয় আপনি পারবেন না।
কারণ আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে আপনাকে ইন্টারনেট কিংবা স্মার্টফোনকে বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু বলা বাহুল্য বর্তমানের তরুণ প্রজন্মকে স্মার্টফোন কতটা সুফল এনে দিচ্ছে তা নিয়ে একটু ভাবার সময় এসেছে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে স্মার্টফোনের অনলাইন ভিত্তিক গেমগুলো মাদকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
এসকল গেমস এত বড় নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এগুলো থেকে বের হওয়াটা খুবই কঠিন। ধরুন মাদক সেবন করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়। যেমন লোকজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেবন করতে হয়। কিন্তু অনলাইন ভিত্তিক স্মর্টফোন গেমসগুলো খেলতে অতটা বেগ পেতে হয়না। কারণ আপনার হাতে একটি মোবাইল থাকলে এখন আপনি নিজেকে এবং সমাজের চোখে কখনো হেয় প্রতিপন্ন ভাবেন না। লোকজন ও এটা নিয়ে কোন মন্তব্য করার সুযোগ পায় না। আর এ সুযোগে পাবজি, ক্লাশ অফ ক্লান, ফ্রী ফায়ার এর মত অনলাইন গেমস গুলো বর্তমানে সংক্রামক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন খেললে তার আশেপাশের সমবয়সী সবাইকে প্রভাবিত করছে এ সকল গেমসগুলো। এটা যে শুধু শহরের ছেলেমেয়েরা খেলছে তা নয় গ্রামের ছেলেরাও এটাকে একটি নেশার মত নিয়েছে। শহরের অলিগলিতে সমবয়সী ছেলেরা খেলার আসর বসিয়ে থাকে। যেহেতু গেমসগুলো ইন্টারনেট ছাড়া খেলা যায় না, তাই প্রতিদিন টাকা খরচ করতে হয় ডাটা কেনার জন্য। আবার খেলার সামগ্রী কিনতে অনলাইনে ডলার ব্যবহার করতে হয়। এটা শুধু আর্থিক ক্ষতি করছে না বরং তরুণ প্রজন্মকে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি সাধন করছে।
যেমন আমরা যারা সারাদিন অনলাইনে কাজ করি তাদের ক্ষেত্রে চোখের সমস্যা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরানো, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হই। তাদের ক্ষেত্রেও এ সকল সমস্যা দেখা দিতে পারে অনায়াসে। তবে ১৫-১৬ বছরের ছেলেরা সবচেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণতা পা বাড়াচ্ছে। যেমন যখন মোবাইলে ডাটা কিংবা ডলার কেনার জন্য টাকা পায় না পরিবারের কাছ থেকে, তখন ছেলেটা চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
এসকল অপরাধপ্রবণ এর ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে মা-বাবা সচেতন হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি।
সুতরাং বলা যায় এ ধরনের নেশা হলো এক মারাত্মক ব্যাধি যার ইতি টানতে হলে আপনাকে কখনো হাসপাতালে কিংবা কখনো জেলে যেতে হতে পারে। তাই এসকল অনলাইন ভিত্তিক গেমসগুলোর নেশা থেকে বাঁচতে হলে পরিবারের সদস্যদের সচেতনতার বিকল্প নাই।
পরিবারের বাবা-মাদের স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার পর তারা স্মার্টফোন দিয়ে কি করছে তার খোঁজখবর নিতে হবে। অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে সে কি করছে অনলাইনে এবং কোন গেম খেলছে কিনা এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।