ছোটবেলায় আপনারা অনেকে পড়েছেন অর্থই অনর্থের মূল। তবে ছোটবেলার তো কখনো ভাবার অবকাশ হয়নি যে কথাটা কি আসলে সত্যি কিনা।
অনেকে টাকা পয়সাকে হাতের ময়লা মনে করলেও বাস্তব জীবনে কিন্তু টাকা পয়সার প্রয়োজন রয়েছে। টাকা বেশি হয়ে গেলে আপনি টাকা-পয়সার সঠিক মূল্যায়ন অনেক সময় করতে নাও পারেন। এজন্য অর্থের পরিচর্যা বিষয়ে জানতে হবে।
তাছাড়া শারীরিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার পাশাপাশি টাকা-পয়সার স্বাস্থ্যের দিকে সঠিক পরিচর্যার প্রতি নজর দেওয়া উচিত। তাই বলা যায়, সুস্বাস্থ্য সমান সমান টাকা পয়সার স্বাস্থ্য।
তাহলে চলুন এখন মূল বিষয়টিতে আলোচনা করা যাক। শত কোটি টাকা আর অর্থবিত্ত বৈভব এক রকম অর্থ বুঝায় না। বরং দৈনন্দিন প্রয়োজনে নিমিত্তে যা প্রয়োজন সেটা সামর্থ্যকেই বোঝায়। তাছাড়া আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন অনিয়মিত প্রয়োজন ব্যায়াম খাদ্যভ্যাস রুটিন মাফিক জীবন যাপন করা ঠিক তেমনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাস্থ্যবান হতে হলেও আপনাকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতেই হবে।
আয় ব্যয় করুন বাজেট অনুযায়ী
অর্থনৈতিকভাবে সফলতার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম একটি ব্যয় বাজেট তৈরি করতে হবে। নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আপনার ব্যয় বাজেট তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে বাজেটের বাহিরে যেন কোন প্রকার ব্যয় না করা হয়।
প্রতি মাসে কত টাকা আপনার খরচ হবে তার একটি সঠিক হিসাব আপনার কাছে রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত কিছু ব্যয় আপনাকে বাজেটে রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। যেমন অনুদান উপহার প্রদান কিংবা বাহিরে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার মত বাজেট গুলো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে।
ঋণ পরিশোধের সচেতন হওয়া
ধরুন আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড বা অন্যান্য বকেয়া ঋণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাসিক মিনিমাম পেমেন্ট পরিশোধ করলে কিন্তু ঋণ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আপনার ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। মাসিক কিস্তির পাশাপাশি মূল অংশের পরিমাণ কমানোর জন্য প্রিন্সিপাল একাউন্ট পেমেন্ট করা যেতে পারে। কারণ ঋণ কমলে সঞ্চয় বেশি হবে। অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের চক্রে পড়ে শুধু ঋণ বৃদ্ধি করে যায়। এটি খুবই বোকামি। আপনাকে সব সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার জন্য স্মার্ট হতে হবে।
নজরদারি করুন ব্যাংক হিসাবে
আপনাকে নিয়মিত ব্যাংক হিসাবের তলব করতে হবে। বর্তমানের ব্যাংক গুলো বিভিন্ন গ্রাফ এর মাধ্যমে তাদের ব্যয় উপস্থাপন করে। এটি পর্যবেক্ষণ করে আপনাদের অযথা বেশি খরচ কমাতে হবে। দেখা যায় বাঙ্গালীদের খরচ করার সময় কোন হুশ জ্ঞান থাকেনা। এরপর মাসের হিসাব করার সময় অতিরিক্ত খরচ দেখে মাথা গরম হয়ে যায়। তাই নিয়মিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর খোঁজ খবর রাখা অত্যন্ত জরুরী।
জরুরী ফান্ড তৈরি করা
আমাদের জীবন সব সময় অনিশ্চিত। আজকের এই মুহূর্তে পরের মুহূর্ত কি হবে সেটি সম্পর্কে আমরা কিন্তু সবসময়ই অনিশ্চিত ধারণা রাখি। আমরা কেউ জানিনা একটু পরে কি হতে যাচ্ছে। তবে মনের ভিতর আশা সঞ্চয় করে তো জীবনকে এগিয়ে নিতে হবে। যাইহোক অনিশ্চিত জীবনে কখনো অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়তে হবে সেটা আমরা কেউ জানিনা।
যেমন চাকরি হারানো ব্যবসা মন্দা কিংবা অর্থনৈতিক দুর্দশার মত বিপর্যস্ত গুলো জনজীবনকে যেকোনো সময়ে ব্যর্থ করে দিতে পারে। তাই এসকল অর্থনৈতিক দুর্দশা যেন জীবনকে থামিয়ে দিতে না পারে সে জন্য জরুরিভিত্তিতে আলাদা ফান্ড তৈরি করা উচিত। তাছাড়া সঞ্চয় করার মাধ্যমে অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য একটি জরুরী ফান্ড তৈরি করতে হবে।
স্বপ্নপূরণে লুকায়িত সঞ্চয় করা
সাধারণ ব্যক্তিদের উপরে সফল ব্যক্তিরা তিন ধরনের হিসাব তৈরি করে রাখেন। প্রথম হিসাবে তাদের থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ যেমন মাসিক বিল বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। দ্বিতীয় হিসেবে থাকে বিনিয়োগ হিসাব। বিনিয়োগ হিসেবে যেখানে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমাসে সঞ্চয় বিনিয়োগ করে থাকেন। এবং তৃতীয় হিসেবে থাকে স্বপ্নপূরণের বিষয়বস্তু। যেমন ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া ভ্রমণ করা এবং বিভিন্ন শখ পূরণ করা। আপনাকে হিসাব রাখতে হবে এই তিন ধরনের হিসেবে আপনার প্রতি মাসে কত টাকা লাগবে।
নিজের অবস্থান অনুযায়ী খরচ করুন
একটি কথা আছে আয় বুঝে ব্যয় করুন। কথাটির গুরুত্ব কিন্তু আপনার জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি মনে করেন সৌভাগ্যক্রমে আপনার কোন একদিন রোলস রয়েলস গাড়ি কিনব রোলেক্স ঘড়ি কেনার সামর্থ্য আসলো। তবে ওই দিনটিতে আপনার এসকল অতিরিক্ত সামগ্রী কেনা ঠিক হবে কিনা সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।
আপনি আপনার জীবনকে পাল্টাতে এসকল বিলাসী পণ্য কতটা ভূমিকা রাখবে তা সঠিকভাবে ঠান্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করতে হবে। লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে সাময়িক বিলাসিতা কে ছাড়ার অভ্যাস করতে হবে।
তাছাড়া কোনো কিছু অর্জন করার চেয়ে বরং সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য নিজের যথেষ্ট পরিমাণে সামর্থ্য আছে কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। সময় নির্ধারণ করে দেবে আপনার সঙ্গে কোনটি মানানসই। এক্ষেত্রে সাময়িক আবেগকে প্রাধান্য না দিয়ে ধৈর্য ধরতে শিখতে হবে।
জীবনের শেষ সময়ের জন্য পরিকল্পনা
আমরা অনেক সময় একটি বড় ভুল করে থাকি সেটা হলো ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা। ভবিষ্যতে কি হবে ভেবে আমরা যে পরিমাণ দুশ্চিন্তা করি তার অল্প পরিমাণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য খরচ করি না। সুতরাং দুশ্চিন্তা করে কিছু হবে না বরং পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করলেই ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাজ করার সামর্থ্য কমে আসবে। এটাই স্বাভাবিক।
আপনি জীবনে কত বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করতে চান এবং অবসর সময় কিভাবে কাটাতে চান তা পূর্বেই নির্ধারণ করা আপনার জন্য ভালো। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকলে ভবিষ্যতের জন্য ব্যয় করার পরিকল্পনা আপনাকে নিশ্চিত অবসরকালীন সময় ভালো রাখবে।
কারণ অবসরকালীন অর্থনৈতিক দুর্দশা থাকলে সেটা হবে দুর্বিষহ। তখন কিছু চাইলেও করা সম্ভব হবে। তাই ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তা না করে অবসরকালীন প্লান তৈরি করে সঞ্চয় করতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আপনার দিনটি ভালো যাবে। তাছাড়া সঠিক সিদ্ধান্ত মানসিকভাবে প্রস্তুতি ইত্যাদি আপনাকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য পরিকল্পনা মাফিক জীবন যাপন করা দুশ্চিন্তা পরিহার করে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সুখ ও সমৃদ্ধি আনা সম্ভব।